DA: পে কমিশন রিপোর্টে বছরে ২ বার ডিএ-র সুপারিশ! বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করলেন মলয় মুখোপাধ্যায়

DA: রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (DA) নিয়ে বিতর্কের আগুন আরও উস্কে দিলেন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন যে, ষষ্ঠ পে কমিশনের রিপোর্টে বছরে দুইবার AICPI সূচক অনুযায়ী ডিএ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই সুপারিশ মানতে নারাজ, এবং সেই কারণেই পে কমিশনের রিপোর্ট আজও অপ্রকাশিত। মলয়বাবুর এই বিস্ফোরক দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারী মহলে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
পে কমিশনের রিপোর্ট এবং ডিএ-র গোপন রহস্য
মলয় মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে গঠিত ষষ্ঠ পে কমিশন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু সেই রিপোর্ট আজ পর্যন্ত জনসমক্ষে আনা হয়নি। তাঁর বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, রিপোর্টে কর্মচারীদের স্বার্থে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল, যার মধ্যে অন্যতম হলো মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত সুপারিশ।
মূল অভিযোগগুলি হলো:
- AICPI অনুযায়ী ডিএ: মলয়বাবুর মতে, পে কমিশনের রিপোর্টে স্পষ্ট বলা আছে যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বছরে দুইবার সর্বভারতীয় উপভোক্তা মূল্য সূচক (AICPI) অনুযায়ী ডিএ দিতে হবে।
- রিপোর্ট গোপনের কারণ: তাঁর দাবি, সরকার যদি এই রিপোর্ট প্রকাশ করে, তাহলে ডিএ সংক্রান্ত মামলায় সরকারের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। ঠিক এই কারণেই পঞ্চম পে কমিশনের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল এবং জয়লাভ সম্ভব হয়েছিল। সরকার সেই পুনরাবৃত্তির ভয়েই ষষ্ঠ পে কমিশনের রিপোর্ট গোপন করে রেখেছে।
- গণতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন: পে কমিশনের রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ না করাকে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন বলে তিনি মনে করেন।
সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ
মলয় মুখোপাধ্যায় আরও বলেন যে, বামফ্রন্ট সরকারের আমলের পঞ্চম পে কমিশনের সুপারিশ মেনে তৎকালীন সরকার AICPI অনুযায়ী ডিএ দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই পথ থেকে সরে এসেছে। তাঁর মতে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে পে কমিশন গঠন করা হয়েছিল শুধুমাত্র কর্মচারীদের ভোট পাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই কমিশনের সুপারিশগুলিকেই ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, রাজ্য সরকার সপ্তম পে কমিশন গঠনেও ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করবে। সম্ভবত ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে আবার একটি নতুন কমিশন গঠন করে কর্মচারীদের মন ভোলানোর চেষ্টা করা হবে, কিন্তু তার বাস্তবিক রূপায়ণ অধরাই থেকে যাবে।
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এবং অন্যান্য রাজ্যের পরিস্থিতি
সাক্ষাৎকারে মলয় মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে অষ্টম পে কমিশন গঠনের পথে এগোচ্ছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ এখনও ষষ্ঠ পে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা যেখানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পে কমিশনের সুবিধা পান এবং তাঁদের ডিএ বেসিক পে-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের কর্মচারীরা বছরের পর বছর ধরে বঞ্চনার শিকার।
আগামী দিনের লড়াই এবং কর্মচারী সংগঠনগুলির ভূমিকা
মলয় মুখোপাধ্যায় রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির বিভাজনের দিকেও আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য রাজ্যে সমস্ত কর্মচারী সংগঠনগুলি একজোট হয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের অধিকার আদায় করে নেয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কর্মচারী সংগঠনগুলির একটি বড় অংশ সরকারের হয়ে দালালি করায় সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সমস্ত কর্মচারীকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন। তাঁর মতে, এই সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনা আদায় করা সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পে কমিশনের অপ্রকাশিত রিপোর্ট এবং ডিএ সংক্রান্ত এই নতুন তথ্য নিঃসন্দেহে আগামী দিনে কর্মচারী আন্দোলনকে এক নতুন দিশা দেখাবে।