Inflation: সুদের হার বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না? মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে RBI ও মোদী সরকারের ব্যর্থতার আসল কারণ জানুন
Inflation: সাধারণ মানুষের জীবনে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব অত্যন্ত গুরুতর। যখন মুদিখানার জিনিসপত্র বা জ্বালানির মতো দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ে, তখন সাধারণ মানুষ আশা করে যে সরকার বা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেবে। মূলত চাহিদা এবং জোগানের উপরেই মুদ্রাস্ফীতি নির্ভর করে। যদি চাহিদা বাড়ে বা জোগান কমে, তাহলে দাম বাড়তে শুরু করে।
কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে দেখা গেছে যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রচলিত নীতিগুলি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। RBI-এর মনিটারি পলিসি কমিটির লক্ষ্য হল মুদ্রাস্ফীতিকে ২% থেকে ৬%-এর মধ্যে রাখা, কিন্তু তারা টানা তিনটি ত্রৈমাসিকে এই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। এর প্রধান কারণ হল মুদ্রাস্ফীতির চরিত্রে একটি বড় পরিবর্তন। এখন মুদ্রাস্ফীতি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ কারণে ঘটছে না, বরং এটি ক্রমবর্ধমানভাবে “আমদানি করা” (imported) হচ্ছে। সুদের হার বাড়ানোর মতো প্রচলিত পদ্ধতি এই নতুন ধরনের মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে অকার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।
আমদানি করা মুদ্রাস্ফীতির চ্যালেঞ্জ
ভারতের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে অনেক বেশি অঙ্গীভূত হয়ে পড়েছে। “Trade to GDP” অনুপাত, যা এই সংযুক্তির একটি পরিমাপক, ১৯৮৮ সালের প্রায় ১৩% থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ৪৫%-এ পৌঁছেছে। এর অর্থ হল, এখন বাইরের চাপ ভারতের অভ্যন্তরীণ গ্রাহকদের উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলছে।
এই “আমদানি করা মুদ্রাস্ফীতি” বিভিন্ন উৎস থেকে আসে:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- ভোজ্য তেল: ভারত তার প্রয়োজনীয় ভোজ্য তেলের অর্ধেকেরও বেশি আমদানি করে। যদি ইন্দোনেশিয়ার মতো একটি বড় সরবরাহকারী দেশ তার রপ্তানি সীমাবদ্ধ করে, তাহলে ভারতে সুদের হার বাড়িয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বরং এটি অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- অপরিশোধিত তেল: অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর নির্ভরতা বছরের পর বছর বাড়ছে। এর দাম শুধুমাত্র পরিবহণ নয়, বিভিন্ন শিল্পকে প্রভাবিত করে, যা একটি শৃঙ্খল প্রভাব তৈরি করে।
- আন্তর্জাতিক ঘটনা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শস্য ও সারের বিশ্বব্যাপী জোগান ব্যাহত হয়েছে। এটি সরাসরি ভারতের কৃষি ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে, কারণ ভারত সারের উপর নির্ভরশীল, যার ফলে খাদ্যের দাম বাড়ে। একইভাবে, সুয়েজ খালের মতো সংকট মাল পরিবহণের খরচ বাড়িয়ে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের উপর চাপানো হয়।
প্রস্তাবিত সমাধান: ট্রেড এক্সপোজার ইনফ্লেশন ইনডেক্স
এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির প্রস্তাব করা হয়েছে: ট্রেড এক্সোজার ইনফ্লেশন ইনডেক্স (Trade Exposure Inflation Index)। এই সূচকটি বিশেষভাবে আমদানি থেকে আসা মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করতে সাহায্য করবে। এর তিনটি মূল উপাদান হল:
- সরাসরি আমদানি: ভোজ্য তেল, মোবাইল ফোন বা সারের মতো সরাসরি আমদানি করা পণ্যের দামের পরিবর্তন।
- মধ্যবর্তী পণ্য: ঔষধের জন্য অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (APIs) বা ইলেকট্রনিক্সের জন্য সেমিকন্ডাক্টরের মতো অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানি করা কাঁচামালের দামের প্রভাব।
- বিনিময় হারের প্রভাব: টাকার অবমূল্যায়ন (দুর্বল রুপি) কীভাবে সমস্ত আমদানিকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে।
এই ধরনের একটি সূচক গ্রহণ করলে নীতি নির্ধারক এবং জনসাধারণ বুঝতে পারবেন যে মুদ্রাস্ফীতি কি অভ্যন্তরীণ কারণে হচ্ছে নাকি বাহ্যিক (আমদানি করা) কারণে। যদি মুদ্রাস্ফীতি আমদানি করা হয়, তবে সরকার সুদের হার বাড়ানোর পরিবর্তে আমদানি শুল্ক কমানো বা কৌশলগত রিজার্ভ ব্যবহার করার মতো আর্থিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে। এটি অপ্রয়োজনীয়ভাবে অর্থনীতির গতি কমানো থেকে বিরত রাখবে যখন আসল সমস্যাটি বাইরে থেকে আসছে।
এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং কোনো প্রকার বিনিয়োগের পরামর্শ দেয় না।