SSC 2016: নতুন শর্তে তোলপাড় রাজ্য! সুপ্রিম কোর্টের স্বস্তি সত্ত্বেও স্কুলে ফিরবেন না চাকরিহারা শিক্ষকরা!

SSC 2016: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিলের পর কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল রাজ্যের কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, আপাতত ‘যোগ্য’ (যারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন) নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকরা এই বছরের শেষ পর্যন্ত স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিতে পারবেন। কিন্তু এই স্বস্তির মধ্যেও তৈরি হয়েছে নতুন এক জটিলতা। চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের সিংহভাগই জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) যতক্ষণ না ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’দের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ্যে আনছে, ততক্ষণ তাঁরা স্কুলে ফিরবেন না।
কেন এই অনড় অবস্থান?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন স্কুলে ফিরতে চাইছেন না এই শিক্ষকরা? তাঁদের মূল যুক্তিগুলি হল:
- সামাজিক মর্যাদা: তালিকা ছাড়া স্কুলে ফিরলে তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা। কে ‘যোগ্য’ আর কে ‘অযোগ্য’, এই ধোঁয়াশা না কাটলে সকলকেই সন্দেহের চোখে দেখা হতে পারে।
- স্কুলের পরিবেশ: একই স্কুলে ‘অযোগ্য’ বা দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি পাওয়া সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে হতে পারে, যা অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং অপমানজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যোগ্য শিক্ষকদের অনেকেই চান না অযোগ্যদের সঙ্গে একাসনে বসতে।
- স্বচ্ছতার দাবি: তাঁরা চাইছেন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা। SSC তালিকা প্রকাশ করলে কার চাকরি বৈধ আর কার নয়, সেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এতে যোগ্যদের সম্মান রক্ষা হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
বর্তমান পরিস্থিতি ও পদক্ষেপ:
গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজ্যের বহু স্কুলেই চাকরিহারা শিক্ষকরা অনুপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন জেলায় ডিআই অফিসের সামনে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান এবং তাঁদের মূল দাবি – তালিকা প্রকাশের – পক্ষে আওয়াজ তোলেন। জানা গেছে, আগামী সোমবার (২১ এপ্রিল) করুণাময়ী থেকে SSC-র মূল দপ্তর আচার্য সদন পর্যন্ত মিছিল ও সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাজভবন অভিযানেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন যে, তালিকা তৈরির কাজ চলছে এবং সম্ভবত সোমবারের মধ্যেই তা প্রকাশ করা হতে পারে। তিনি এও আশ্বাস দিয়েছেন যে রাজ্য সরকার যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে এবং তাঁদের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট। তবে, গ্রুপ-সি ও ডি কর্মীদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের এই সাময়িক স্বস্তির নির্দেশ প্রযোজ্য না হওয়ায় তাঁদের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।
এর প্রভাব কী হতে পারে? (গুরুত্বপূর্ণ দিক)
- পঠনপাঠনে বিঘ্ন: শিক্ষকরা স্কুলে না ফিরলে অনেক স্কুলেই পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে, বিশেষ করে যেখানে এই শিক্ষকদের সংখ্যা বেশি।
- SSC-র উপর চাপ: শিক্ষকদের এই সম্মিলিত অবস্থান SSC-র উপর দ্রুত তালিকা প্রকাশের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
- অনিশ্চয়তা: যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ এবং বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
- অভিভাবক ও পড়ুয়াদের জন্য: পরিস্থিতি বেশ জটিল। একদিকে আদালতের নির্দেশ, অন্যদিকে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি। এর দ্রুত এবং সম্মানজনক সমাধান প্রয়োজন, যার জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে।
সব মিলিয়ে, SSC শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের স্কুলে ফেরা এখন আটকে রয়েছে SSC-র তালিকা প্রকাশের উপর। সকলের নজর এখন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। স্বচ্ছতা এবং যোগ্যদের সম্মান রক্ষার দাবিই এই মুহূর্তে চাকরিহারা শিক্ষকদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।