SSC 2016: বড় খবর! কর্মচ্যুত স্কুলকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে নতুন প্রকল্প, দেখুন অর্ডার

SSC 2016: রাজ্য সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিযুক্ত এবং পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য “পশ্চিমবঙ্গ জীবনজীবিকা ও সামাজিক সুরক্ষা অন্তর্বর্তীকালীন প্রকল্প, ২০২৫” (West Bengal Livelihood and Social Security Interim Scheme, 2025) চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি মানবিকতার খাতিরে এবং সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে চালু করা হয়েছে, যতদিন না এই সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হচ্ছে। এই প্রকল্পটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেই ঘোষণা করেছিলেন।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট
আদালতের রায়ের ফলে চাকরি হারানো নন-টিচিং স্টাফদের পরিবারগুলি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতেই রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ। সংবিধানের ২১ নং ধারা অনুযায়ী জীবনধারণের অধিকার এবং ৪১ নং ধারা অনুযায়ী বেকার অবস্থায় সরকারি সহায়তা পাওয়ার অধিকারকে মান্যতা দিয়েই এই প্রকল্প আনা হয়েছে বলে অর্ডারে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন ইতিমধ্যেই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সহায়তা প্রকল্প ততদিন পর্যন্ত চলবে, যতদিন না সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেয় অথবা রাজ্য সরকার অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রম দপ্তর এই প্রকল্পের নোডাল দপ্তর হিসেবে কাজ করবে।
কারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন?
এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন সেই সমস্ত নন-টিচিং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি স্টাফ, যারা:
- ২০১৬ সালের নিযুক্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন দ্বারা নিযুক্ত হয়েছিলেন।
- আদালতের রায়ের কারণে চাকরি হারিয়েছেন এবং যাদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
- আদালতের রায়ের সময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের স্থায়ী শূন্যপদের সাপেক্ষে পে-রোলে যাদের নাম ছিল।
- আবেদনের তারিখে যাদের বয়স সুপারঅ্যানুয়েশনের ঊর্ধ্বে যায়নি।
- আবেদনের সময় অন্য কোনও পেশায় লাভজনকভাবে নিযুক্ত নন।
- যাদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বা শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে চাকরি যায়নি বা বেতন বন্ধ হয়নি।
সহায়তার পরিমাণ ও সময়কাল
- যোগ্য গ্রুপ সি কর্মীর পরিবার প্রতি মাসে ২৫,০০০ টাকা পাবে।
- যোগ্য গ্রুপ ডি কর্মীর পরিবার প্রতি মাসে ২০,০০০ টাকা পাবে।
- এই সহায়তা ১লা এপ্রিল, ২০২৫ থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে।
- টাকা সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনলাইনে পাঠানো হবে।
কখন এই সহায়তা বন্ধ হতে পারে?
নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য এই আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে:
- আবেদনকারীর মৃত্যু হলে।
- আবেদনকারী সুপারঅ্যানুয়েশনের বয়সে পৌঁছলে।
- সুপ্রিম কোর্টে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলে অথবা আদালত অন্য কোনও নির্দেশ দিলে।
- আবেদনকারী অন্য কোনও উপার্জনের পথ খুঁজে পেলে।
- রাজ্য সরকারের নেওয়া কোনও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বা প্রকল্পের নিয়মাবলীর অন্য কোনও ধারার অধীনে।
আবেদন প্রক্রিয়া এবং যাচাইকরণ
আগ্রহী যোগ্য কর্মীদের নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে (পিডিএফ-এর Annexure-A, নিচে পিডিএফ এর লিংক দেওয়া আছে) আবেদন করতে হবে। এই আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল পরিদর্শকের (DI of Schools) মাধ্যমে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব বা প্রধান সচিব বা সচিবের কাছে জমা দিতে হবে। স্কুল শিক্ষা দপ্তর সেই আবেদন শ্রম দপ্তরে পাঠাবে। একটি স্ক্রিনিং কমিটি এই আবেদনগুলি যাচাই করে যোগ্যদের নির্বাচন করবে, যার চেয়ারম্যান হবেন রাজ্যের শ্রম কমিশনার। কোনও অভিযোগ থাকলে তার নিষ্পত্তির জন্য শ্রম দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব/প্রধান সচিব/সচিবের কাছে আপিল করা যাবে, যিনি Appellate Authority হিসেবে কাজ করবেন।
আবেদনপত্রে বিভিন্ন তথ্য যেমন – নাম, ঠিকানা, কর্মস্থলের বিবরণ, চাকরির মেয়াদ, শেষ প্রাপ্ত বেতন, চাকরি হারানোর তারিখ ও কারণ (সুপ্রিম কোর্টের রায়), OSMS আইডি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ ইত্যাদি দিতে হবে। আবেদনপত্রটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান দ্বারা স্বাক্ষরিত ও স্ট্যাম্প করা হতে হবে।
এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী এবং এটি কোনও স্থায়ী অধিকার তৈরি করবে না। এটি মহামান্য আদালতের যে কোনও নির্দেশ বা রায়ের সাপেক্ষে কার্যকর হবে। প্রকল্পটি অর্থ দপ্তর এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাভ করেছে। রাজ্য সরকার সংবিধানের ১৬২ নং ধারা অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নিয়েছে।