Arrear DA Calculation: রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র হিসাব বুঝিয়ে দিলেন মলয়বাবু

Arrear DA Calculation: অবশেষে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ (Dearness Allowance) বা মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত দীর্ঘ প্রতীক্ষার কিছুটা অবসান ঘটতে চলেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারী কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী মলয় মুখোপাধ্যায় মহার্ঘ ভাতার বকেয়া হিসাবের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই ব্যাখ্যা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য বকেয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারবেন।
শ্রী মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, এই হিসাব পদ্ধতি ইতিমধ্যেই ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে। মূলত ROPA 2009 (Revision of Pay and Allowance) অনুযায়ী ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যে মহার্ঘ ভাতা প্রাপ্য ছিল, তার বিস্তারিত খতিয়ান এই পদ্ধতিতে তুলে ধরা হয়েছে।
বকেয়া ডিএ হিসাবের মূল বিষয়গুলি:
শ্রী মলয় মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে বিভিন্ন সময়কালের জন্য প্রাপ্য ডিএ এবং তার বকেয়ার হিসাব ধাপে ধাপে বুঝিয়েছেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই হিসাবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
- আইনি ভিত্তি: ২০০৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ROPA 2009 সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কর্মচারীদের ডিএ পাওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়েছে, যা ১লা এপ্রিল ২০০৮ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
- দাবির প্রেক্ষাপট: সর্বভারতীয় মূল্যসূচকের ভিত্তিতে প্রথমে ১২% ডিএ পাওয়ার পর আরও ১৬% ডিএ-র দাবি করা হয়েছিল। এই ১২% ডিএ ROPA 2009 অনুযায়ী তিনটি কিস্তিতে দেওয়া হয় – দুটি বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এবং একটি তৃণমূল সরকারের আমলে (২টি কিস্তিতে ভাগ করে)। পরবর্তী ১৬% নতুন বেতন কাঠামোর সঙ্গে পাওয়া যায়।
- ROPA 2009 অনুযায়ী প্রাপ্য: ROPA 2009 অনুযায়ী, AICPI (All India Consumer Price Index)-এর ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে ডিএ প্রাপ্য ছিল।
- বিভিন্ন সময়কালে বকেয়ার হার:
- ১লা জানুয়ারি ২০১২ থেকে: ৫ মাসের জন্য ৬% হারে বকেয়া (উদাহরণস্বরূপ, ১০,০০০ টাকা বেসিকে যা দাঁড়ায় ৩,০০০ টাকা)।
- এরপর বিভিন্ন সময়ে (২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত) বকেয়া ডিএ-র হার ছিল যথাক্রমে ৫% (৯ মাসের জন্য), ৮% (১১ মাসের জন্য), ১০% (১৮ মাসের জন্য), ৭% (২৪ মাসের জন্য), ৬% (৩০ মাসের জন্য), ৭% (৩৬ মাসের জন্য), ৭% (৪২ মাসের জন্য), ৮% (৪৮ মাসের জন্য) এবং সব মিলিয়ে ১৫% (৫৪ মাসের জন্য)। এই হিসাবগুলি পরবর্তীতে কিছু ক্ষেত্রে পরিমার্জিতও হয়েছে।
- অতিরিক্ত ডিএ-র সমন্বয়: শ্রী মলয় মুখোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করেছেন যে, কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়ে বেশি হারে ডিএ দিয়েছে (যেমন ১লা জানুয়ারি ২০১৪), সেই অতিরিক্ত অংশকে পরবর্তী সময়ে (যেমন ২৪, ৩৬ বা ৪৮ মাস ধরে) সমন্বয় করা হয়েছে।
- ২০১৯ পর্যন্ত চূড়ান্ত হিসাব: ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত চূড়ান্ত বকেয়ার হিসাবও তিনি দিয়েছেন। যেমন, ১লা জানুয়ারি ২০১৪ থেকে প্রাপ্য ৭% যা ১লা জানুয়ারি ২০১৯-এ পাওয়া গেছে ৫৪ মাসের জন্য, ১লা জানুয়ারি ২০১৫ থেকে প্রাপ্য ৬% যা ১লা জানুয়ারি ২০১৯-এ পাওয়া গেছে ৪৮ মাসের জন্য, এবং আরও কয়েকটি কিস্তির উল্লেখ রয়েছে।
- মোট বকেয়া ও পরিশোধের সম্ভাবনা: সমস্ত বকেয়া শতাংশ একত্রিত করে মোট পরিমাণ হিসাব করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি এবং জানিয়েছেন যে এই বকেয়া চারটি কিস্তিতে বা ২৫% করে ধাপে ধাপে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের নিজ নিজ বেসিক পে (Basic Pay) অনুযায়ী প্রাপ্য বকেয়া মহার্ঘ ভাতা হিসাব করতে পারবেন। শ্রী মুখোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন যে, এই হিসাব বুঝতে অসুবিধা হলে বা কোনও প্রশ্ন থাকলে তা লিখিতভাবে জানানো যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ:
এখানে উল্লেখ্য যে, এই ডিএ বকেয়া সংক্রান্ত মামলায় সম্প্রতি (১৬ই মে, ২০২৫) সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এই রায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ীজ এই মামলায় অন্যতম আবেদনকারী পক্ষ।
শ্রী মলয় মুখোপাধ্যায়ের এই ব্যাখ্যা এবং সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার কত দ্রুততার সঙ্গে এই নির্দেশ পালন করে এবং কর্মচারীরা তাঁদের প্রাপ্য বকেয়া কবে নাগাদ হাতে পান।