SSC: সুপ্রিম কোর্টে শক্তিশালী রিভিউ ড্রাফট, বিকাশভবনে চাকরিহারাদের সাথে বৈঠকে কি হলো দেখুন

SSC: স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে চাকরি হারানো যোগ্য শিক্ষকেরা তাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই শিক্ষকেরা সম্প্রতি বিকাশ ভবনে শিক্ষা সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন, যেখানে তাদের মূল দাবি এবং উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এখানেই উঠে এসেছে রাজ্যের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী রিভিউ ড্রাফট পেশ করার কথা।
শিক্ষকদের মূল দাবি ও উদ্বেগ:
চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের প্রধান দাবি হলো, কোনো রকম পুনঃপরীক্ষা ছাড়াই তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। তারা মনে করেন যে তারা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন এবং মেধার ভিত্তিতেই তারা চাকরি পেয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করার পর নতুন করে পরীক্ষায় বসা তাদের পক্ষে অপমানজনক এবং বর্তমান শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় কঠিন।
চাকরিহারা শিক্ষকেরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়েও গভীরভাবে চিন্তিত। তাদের আশঙ্কা, এই নতুন বিজ্ঞপ্তি তাদের পুনর্বহালের প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই, তাদের দাবি সুপ্রিম কোর্টে সরকারের রিভিউ পিটিশন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত যেন নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি না করা হয়। এছাড়াও, যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে সিবিআই দ্বারা যাচাইকৃত মূল ওএমআর শিটের ভিত্তিতে রি-প্যানেলিংয়ের মাধ্যমে যোগ্যদের দ্রুত নিয়োগের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
সরকারের অবস্থান ও পদক্ষেপ:
শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, রাজ্য সরকার যোগ্য শিক্ষকদের পাশে আছে এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। তারা একটি শক্তিশালী রিভিউ ড্রাফট তৈরি করেছে যা সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হবে এবং ইতিমধ্যেই সেই ফাইলের ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। তবে, রিভিউ পিটিশন গৃহীত হওয়া এবং তার সময়সীমা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের উপর নির্ভরশীল, বিশেষত জুনে আংশিক শুনানির আগে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো সম্ভব হয়নি।
নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে বাধ্য এবং এই বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করছেন। তবে বিজ্ঞপ্তির প্রকাশনার তারিখ বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। সরকার মূলত আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।
শিক্ষকদের হতাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বৈঠকে কোনো সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি না পাওয়ায় শিক্ষকেরা হতাশ। বিশেষত শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করতে না পারায় তাদের ক্ষোভ বেড়েছে, কারণ তারা মনে করেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর কেবল শিক্ষামন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীই দিতে পারবেন।
এই পরিস্থিতিতে, শিক্ষকেরা তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচী অব্যাহত রাখার পাশাপাশি, তারা এই আন্দোলনকে দিল্লির স্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন যে, তারা তাদের দুর্দশার কথা জানাতে এবং সমর্থনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা অন্যান্য রাজ্যের সমস্ত বিধায়ক ও সাংসদদের চিঠি দেবেন, যাতে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে এই বিষয়টি উত্থাপন করা যায়। এছাড়াও, তারা বর্তমান ধর্নামঞ্চের (যেটি হাইকোর্টের নির্দেশে নির্দিষ্ট স্থানে চলছে) প্রতিকূল পরিস্থিতি, বিশেষত বর্ষাকালে, এবং সেখানে শিশুসহ শিক্ষকদের দুর্দশার কথাও তুলে ধরেছেন ও প্রশাসনের কাছে আরও ভালো ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
সামগ্রিকভাবে, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। একদিকে আইনি জটিলতা, অন্যদিকে তাদের ন্যায্য চাকরির দাবি -এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে তাদের আন্দোলন কোন পথে এগোয় এবং সরকার তথা বিচারব্যবস্থা কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই সকলের দৃষ্টি থাকবে।