ITR: ফর্ম ১৬ ছাড়াই আয়কর রিটার্ন ফাইল করবেন কীভাবে? জেনে নিন সহজ পদ্ধতি

ITR: আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করার সময় ফর্ম ১৬ একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। সাধারণত, নিয়োগকর্তা বা সংস্থা তাদের কর্মীদের এই ফর্মটি সরবরাহ করে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স) সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য থাকে। তবে, এমন অনেক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যখন আপনার কাছে ফর্ম ১৬ নাও থাকতে পারে। যেমন – আপনি চাকরি পরিবর্তন করেছেন, আপনার সংস্থা সময়মতো ফর্ম ১৬ দেয়নি, অথবা আপনি একজন স্ব-নিযুক্ত (Self Employed) ব্যক্তি।
চিন্তার কোনও কারণ নেই! ফর্ম ১৬ ছাড়াও আপনি আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে পারবেন। এর জন্য কিছু বিকল্প পদ্ধতি এবং নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। আসুন, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ফর্ম ১৬ ছাড়া আইটিআর ফাইলের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:
ফর্ম ১৬ না থাকলে আয়কর রিটার্ন ফাইল করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
- বেতনের স্লিপ (Salary Slips) সংগ্রহ করুন: আপনার যদি ফর্ম ১৬ না থাকে, তাহলে সারা বছরের বেতনের স্লিপগুলি সংগ্রহ করুন। এই স্লিপগুলিতে আপনার মাসিক বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য ডিডাকশন সম্পর্কিত তথ্য থাকবে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার মোট আয় এবং টিডিএস গণনা করতে পারবেন।
- ফর্ম ২৬এএস (Form 26AS) ডাউনলোড করুন: ফর্ম ২৬এএস হল একটি বার্ষিক ট্যাক্স স্টেটমেন্ট, যা আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইটে আপনার প্যান (PAN) নম্বরের সাপেক্ষে উপলব্ধ থাকে। এতে আপনার বিভিন্ন উৎস থেকে হওয়া আয় এবং জমা দেওয়া ট্যাক্সের (টিডিএস, টিসিএস, অ্যাডভান্স ট্যাক্স ইত্যাদি) বিবরণ থাকে। আপনি আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে এটি সহজেই ডাউনলোড করতে পারবেন। আপনার বেতনের স্লিপের সাথে ফর্ম ২৬এএস-এর তথ্য মিলিয়ে দেখুন।
- মোট আয় গণনা করুন: আপনার বেতনের স্লিপ, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট (সুদের আয় জানার জন্য), ভাড়ার রশিদ (যদি বাড়ি ভাড়া থেকে আয় থাকে) এবং অন্যান্য আয়ের প্রমাণপত্র থেকে আপনার সারা বছরের মোট আয় গণনা করুন। এর মধ্যে বেতন, গৃহ সম্পত্তি থেকে আয়, মূলধনী লাভ, এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
- টিডিএস গণনা ও যাচাই: আপনার বেতনের স্লিপ এবং ফর্ম ২৬এএস থেকে মোট টিডিএস গণনা করুন। যদি কোনও গরমিল থাকে, তাহলে আপনার সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে তার কারণ জেনে নিন।
- ছাড়ের (Deductions) হিসাব করুন: পুরানো রেজিম ব্যবহার করলে আয়কর আইনের বিভিন্ন ধারা (যেমন ৮০সি, ৮০ডি, ৮০জি ইত্যাদি) অনুযায়ী আপনি যে সমস্ত ছাড়ের জন্য যোগ্য, সেগুলি গণনা করুন। এর জন্য আপনার বিনিয়োগের প্রমাণপত্র (যেমন জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, পিপিএফ, এনএসসি, মিউয়াল ফান্ড (ইএলএসএস), হোম লোনের সুদের সার্টিফিকেট, দানের রশিদ ইত্যাদি) হাতের কাছে রাখুন। সঠিক ছাড় গণনা করলে আপনার করযোগ্য আয় কমে আসবে।
- করযোগ্য আয় এবং চূড়ান্ত কর গণনা: মোট আয় থেকে সমস্ত প্রযোজ্য ছাড় বাদ দেওয়ার পর আপনি করযোগ্য আয় পাবেন। এরপর প্রযোজ্য ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী আপনার চূড়ান্ত কর দায় গণনা করুন। যদি আপনার অতিরিক্ত কর দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিন। আর যদি আপনার প্রাপ্য রিফান্ড থাকে, তাহলে তা রিটার্নে উল্লেখ করুন।
- সঠিক আইটিআর ফর্ম নির্বাচন করুন: আপনার আয়ের উৎস এবং পরিমাণ অনুযায়ী সঠিক আইটিআর ফর্ম (যেমন আইটিআর-১ সহজ, আইটিআর-২, আইটিআর-৩, আইটিআর-৪ সুগম ইত্যাদি) নির্বাচন করুন।
- আয়কর পোর্টালে রিটার্ন ফাইল করুন: আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্বাচিত আইটিআর ফর্মে সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং রিটার্ন জমা দিন।
- ই-ভেরিফাই (e-verify) করুন: রিটার্ন জমা দেওয়ার পর অবশ্যই ই-ভেরিফাই করুন। আধার ওটিপি, নেট ব্যাঙ্কিং বা ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সহজেই ই-ভেরিফিকেশন করা যায়। ই-ভেরিফিকেশন না করলে আপনার রিটার্ন অসম্পূর্ণ বলে গণ্য হবে।
যে বিষয়গুলি মনে রাখবেন:
- ফর্ম ১৬ না থাকলেও সঠিক তথ্য দিয়ে সময়মতো আয়কর রিটার্ন ফাইল করা অত্যন্ত জরুরি।
- সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি, যেমন – বেতনের স্লিপ, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, বিনিয়োগের প্রমাণপত্র ইত্যাদি হাতের কাছে রাখুন।
- ফর্ম ২৬এএস অবশ্যই ডাউনলোড করে আপনার আয়ের সাথে মিলিয়ে নিন।
- গণনার সময় সতর্ক থাকুন যাতে কোনও ভুল না হয়। প্রয়োজনে কোনও কর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
ফর্ম ১৬ ছাড়া আয়কর রিটার্ন ফাইল করা একটু বেশি সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি কঠিন কাজ নয়। উপরের পদক্ষেপগুলি আপনাকে এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে।