Income Tax Refund: আয়কর রিফান্ডে কি সত্যিই ৩৩% সুদ দেবে আয়কর দপ্তর? জানুন আসল তথ্য!

Income Tax Refund: আয়করদাতাদের জন্য একটি সুখবর সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে – বলা হচ্ছে এই বছর আয়কর রিফান্ডে ৩৩% পর্যন্ত বেশি সুদ পাওয়া যেতে পারে! খবরটা শুনে অনেকেই হয়তো উৎসাহিত হয়েছেন, কিন্তু এর পেছনের আসল ঘটনাটা কী? সত্যিই কি আয়কর বিভাগ এত বেশি হারে সুদ দিচ্ছে? আসুন, এই বিষয়টি সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক।
আয়কর আইনের ধারা ২৪৪এ আসলে কী?
প্রথমেই বুঝতে হবে আয়কর রিফান্ডের উপর সুদ কীভাবে নির্ধারিত হয়। আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ধারা ২৪৪এ অনুযায়ী, যদি কোনও করদাতা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ট্যাক্স জমা দিয়ে থাকেন, তবে সেই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার সময় আয়কর বিভাগ তাকে সুদ দিতে বাধ্য। এই সুদের হার হলো প্রতি মাসে ০.৫% অথবা বার্ষিক ৬% সরল সুদ। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এই সুদ তখনই প্রযোজ্য হবে যদি রিফান্ডের পরিমাণ আপনার মোট কর দায়ের ১০% বা তার বেশি হয়।
তাহলে এই “৩৩% বেশি সুদ” কথার অর্থ কী?
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের (অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার ২০২৫-২৬) আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩১ জুলাই, ২০২৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সময়সীমা বৃদ্ধির কারণেই রিফান্ডের উপর প্রাপ্ত সুদের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে, যাকে কিছু ক্ষেত্রে “৩৩% পর্যন্ত বেশি” বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
ব্যাপারটা একটু ভেঙে বলা যাক। সাধারণত, যদি আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইটিআর ফাইল করেন, তাহলে অ্যাসেসমেন্ট ইয়ারের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা এপ্রিল থেকে রিফান্ড ইস্যু হওয়ার দিন পর্যন্ত সময়ের জন্য ০.৫% হারে মাসিক সুদ গণনা করা হয়।
যেহেতু আইটিআর ফাইলের সময়সীমা প্রায় দেড় মাস বেড়েছে, এবং যদি আপনার রিফান্ড প্রসেসিং হতে অক্টোবর মাস হয়ে যায়, তাহলে আপনি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে প্রায় দুই মাস বেশি সময়ের জন্য সুদ পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আগে আপনি ৪ মাসের সুদ পেতেন, এখন ৬ মাসের সুদ পেতে পারেন। এই অতিরিক্ত ২ মাসের সুদকেই অংকের হিসাবে প্রায় ৩৩% (বা কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি, যেমন ৫০%) বৃদ্ধি হিসাবে দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ, আপনার রিফান্ডের মূল অংকের উপর ৩৩% হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে না, বরং আগে যে পরিমাণ সুদ পেতেন, তার থেকে এই বছর ৩৩% (বা কাছাকাছি) বেশি পরিমাণ সুদ পেতে পারেন।
উদাহরণ: ধরা যাক, আপনার রিফান্ডের পরিমাণ ২৫,০০০ টাকা। যদি সাধারণ পরিস্থিতিতে (জুলাইতে ফাইলিং, আগস্টে রিফান্ড) আপনি ৪ মাসের সুদ পেতেন ৫০০ টাকা (২৫০০০ * ০.৫% * ৪), পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে (সেপ্টেম্বরে ফাইলিং, অক্টোবরে রিফান্ড) আপনি ৬ মাসের সুদ পাবেন ৭৫০ টাকা (২৫০০০ * ০.৫% * ৬)। এক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ ২৫০ টাকা বেড়েছে, যা আগের সুদ ৫০০ টাকার ৫০%। কিছু গণনায় এই বৃদ্ধিকে ৩৩% এর কাছাকাছি দেখানো হতে পারে, যা নির্ভর করছে কত মাসের অতিরিক্ত সুদ গণনা করা হচ্ছে তার উপর। মূল বার্তা হলো, সুদের হার (বার্ষিক ৬%) একই থাকছে, শুধু সময়কাল বাড়ার কারণে মোট প্রাপ্ত সুদের অঙ্ক বাড়ছে।
সুদ কীভাবে গণনা করা হয়?
- যদি আইটিআর অ্যাসেসমেন্ট ইয়ারের নির্ধারিত তারিখের (এক্ষেত্রে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) মধ্যে জমা দেওয়া হয়, তাহলে সুদ গণনা শুরু হবে ১লা এপ্রিল, ২০২৫ থেকে রিফান্ড মঞ্জুর হওয়ার তারিখ পর্যন্ত।
- যদি নির্ধারিত তারিখের পরে আইটিআর জমা দেওয়া হয়, তাহলে সুদ গণনা শুরু হবে আইটিআর জমার তারিখ থেকে রিফান্ড মঞ্জুর হওয়ার তারিখ পর্যন্ত।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- আয়কর রিফান্ডের উপর প্রাপ্ত সুদ কিন্তু করযোগ্য। এই সুদ ‘অন্যান্য উৎস থেকে আয়’ (Income from Other Sources) হিসাবে আপনার পরবর্তী বছরের আয়কর রিটার্নে দেখাতে হবে।
- দ্রুত এবং সঠিক সময়ে রিফান্ড পাওয়ার জন্য আইটিআর ফর্মে আপনার ব্যাঙ্কের বিবরণ সঠিকভাবে দিন এবং অ্যাকাউন্টটি প্রি-ভ্যালিডেট করে রাখুন।
- শুধুমাত্র সামান্য বেশি সুদ পাওয়ার আশায় আইটিআর ফাইল করতে দেরি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সময়মতো রিটার্ন ফাইল করা সবসময়ই শ্রেয়।
সুতরাং, আয়কর রিফান্ডের উপর এই বছর কিছুটা বেশি সুদ পাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে, তবে তা ৩৩% বার্ষিক সুদের হার নয়, বরং বর্ধিত সময়কালের জন্য প্রাপ্ত মোট সুদের পরিমাণে বৃদ্ধি। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সময়মতো এবং নির্ভুলভাবে আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করুন।