WBSSC বিজ্ঞপ্তি নিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক মন্তব্য: নতুন বিতর্ক

WBSSC: প্রাক্তন বিচারপতি ও বর্তমান বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলী সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (WBSSC) নতুন শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই বিজ্ঞপ্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন যা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আসুন, তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয়গুলি বিস্তারিত জেনে নিই।
অভিজ্ঞতার নম্বরে কারচুপি ও নতুনদের প্রতি অবিচার?
প্রাক্তন বিচারপতি গাঙ্গুলীর মতে, নতুন বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর ধার্য করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক ও নতুন চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি চরম অবিচারের সামিল। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যে বিজ্ঞপ্তিটি সকল চাকরিপ্রার্থীর জন্য, সেখানে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নম্বর দেওয়ার অর্থ হল নতুনরা শুরুতেই পিছিয়ে পড়া। এর ফলে, সদ্য পাশ করা মেধাবী প্রার্থীরা কোনওভাবেই এই ১০ নম্বর পাবেন না এবং প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন। এই নিয়ম বছরের পর বছর ধরে নতুনদের বঞ্চিত করবে, কারণ চাকরি না পেলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনও প্রার্থী এই ১০ নম্বরের সুবাদে নতুনদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন, যা নতুনদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাকে কার্যত শেষ করে দেবে।
মৌখিক পরীক্ষা ও ডেমোনস্ট্রেশনে দুর্নীতির আশঙ্কা
সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন বিচারপতি গাঙ্গুলী মৌখিক পরীক্ষা (Oral Interview) এবং লেকচার ডেমোনস্ট্রেশনের জন্য বরাদ্দ মোট ২০ নম্বরের (১০+১০) স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, এই ২০ নম্বর মূলত পরীক্ষকের ইচ্ছাধীন এবং এখানে নম্বরের কারচুপি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, লিখিত পরীক্ষার পর এই পর্যায়ে টাকার বিনিময়ে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার মতো দুর্নীতি হতে পারে। এর ফলে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন এবং অযোগ্যরা চাকরি পেয়ে যাবেন, যা গোটা ব্যবস্থাকেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করবে।
নিয়মের গেরো ও ‘টেন্টেড’ প্রার্থীদের সুবিধা?
অভিজিৎ গাঙ্গুলী আরও উল্লেখ করেছেন যে, ২০১৬ সালের প্রার্থীদের মূল্যায়ন ২০১৬ সালের নিয়ম অনুযায়ী হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তাঁদের জন্য ২০২৫ সালে নতুন নিয়ম তৈরি করা হচ্ছে, যা অনুচিত। বিজ্ঞপ্তিতে কারা পরীক্ষায় বসার যোগ্য এবং কারা নয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও “কলঙ্কিত” (tainted) ও “অকলঙ্কিত” (untainted) প্রার্থীদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হয়নি। তাঁর মতে, অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর ধার্য করার ফলে পরোক্ষভাবে ‘কলঙ্কিত’ প্রার্থীরাও সুবিধা পেয়ে যেতে পারেন।
সব মিলিয়ে, প্রাক্তন বিচারপতি গাঙ্গুলীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই নতুন বিজ্ঞপ্তি নতুন চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করছে এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাও সঠিকভাবে মানা হয়নি। এই অভিযোগগুলি রাজ্য রাজনীতিতে এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়।