Teacher Show Cause Notice: প্রধান শিক্ষকরা কি আদৌ নোটিশ দিতে পারেন? শো কজ নোটিশ নিয়ে আইনি জট!

Teacher Show Cause Notice: ধর্মঘটের দিনে শিক্ষকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের (WBBSE) জারি করা নতুন নির্দেশিকায় একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অনুপস্থিত শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর (Show-Cause) নোটিশ দেবেন প্রধান শিক্ষকরা। কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা এবং আদালতের পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণ বলছে, প্রধান শিক্ষক বা স্কুল পরিচালন সমিতির এই ধরনের নোটিশ সরাসরি জারি করার এক্তিয়ার নেই। এই নিয়েই তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও আইনি জটিলতা।
আইনি প্রক্রিয়া আসলে কী?
পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠলে তার নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট আইন ও নিয়মাবলী রয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি মূলত “West Bengal Board of Secondary Education (Appointment, Confirmation, Conduct and Discipline of Teachers and Non-Teaching Staff) Rules, 2018” দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই নিয়মাবলী অনুসারে:
- কর্তৃপক্ষ কে: শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারী হলো মধ্যশিক্ষা পর্ষদ (WBBSE)।
- স্কুলের ভূমিকা: যদি কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তবে স্কুলের পরিচালন সমিতি বা প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করতে পারেন। তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের থেকে জবাব চাইতে পারেন।
- পর্ষদের অনুমোদন: যদি স্কুলের পরিচালন সমিতি মনে করে যে অভিযোগ গুরুতর এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তবে তারা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সহ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুরু করার জন্য “প্রথম অনুমোদন” (First Approval) চাইতে হয়।
- চূড়ান্ত পদক্ষেপ: পর্ষদ সেই আবেদন খতিয়ে দেখে এবং অনুমোদন দিলেই স্কুল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া স্কুলের জারি করা কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ আইনিভাবে বৈধ নাও হতে পারে।
নতুন নির্দেশিকা এবং বিতর্ক
সম্প্রতি ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে পর্ষদ যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তাতে সরাসরি প্রধান শিক্ষকদের অনুপস্থিত শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে। এখানেই তৈরি হয়েছে মূল দ্বন্দ্ব। আইন অনুসারে, যেখানে পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া প্রধান শিক্ষকের সরাসরি নোটিশ জারির এক্তিয়ার সীমিত, সেখানে সরকারি নির্দেশিকা তাদের সেই কাজ করতে বলছে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে কলকাতা হাইকোর্টের একটি শুনানিতে পর্ষদের আইনজীবী নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে, স্কুল কর্তৃপক্ষের সরাসরি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির ক্ষমতা নেই। তারা শুধুমাত্র পর্ষদ এবং জেলা স্কুল পরিদর্শককে (DI) অভিযোগ জানাতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, যদি কোনো প্রধান শিক্ষক সরকারি নির্দেশ মেনে সরাসরি শো-কজ নোটিশ জারি করেন, তবে সেই নোটিশের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। শিক্ষকরা এই নোটিশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে আইনি জটিলতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই দ্বিমুখী চাপে পড়ে রাজ্যের প্রধান শিক্ষকরাও বিভ্রান্ত এবং উভয়সঙ্কটে পড়েছেন।