BLO Duty Rules: শিক্ষকদের BLO ডিউটি বিতর্ক, বিএলও ডিউটি কি বাধ্যতামূলক? শিক্ষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

BLO Duty Rules: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসাবে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ, অন্যদিকে শিক্ষকদের অধিকার ও শিক্ষাদানের কর্তব্য—এই দুইয়ের টানাপোড়েনে অনেক শিক্ষকই বিভ্রান্ত। এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিএলও ডিউটি সংক্রান্ত নিয়মকানুন, শিক্ষকদের অধিকার এবং এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বিএলও নিয়োগের আইনি ভিত্তি কী?
নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক নির্দেশ অনুযায়ী, সমস্ত শিক্ষককে বিএলও ডিউটি পালন করতে হবে। এই নির্দেশের ভিত্তি হল জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০-এর ধারা ১৩বি(২)। এই আইন অনুযায়ী:
- রাজ্য বা স্থানীয় সরকারের গ্রুপ সি বা তার ওপরের পদের নিয়মিত কর্মচারীরা বিএলও নিয়োগের জন্য প্রথম পছন্দ।
- যদি এই কর্মচারীরা উপলব্ধ না থাকেন, তবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক বা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ করা যেতে পারে।
কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। শিক্ষকদের তাঁদের নিজের জেলার বাইরে বা যে বুথের বাসিন্দা নন, সেখানেও নিয়োগ করা হচ্ছে, যা নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ডিউটি অস্বীকার করলে কি শাস্তি হতে পারে?
অনেক শিক্ষকের মধ্যেই ভয় কাজ করে যে, বিএলও ডিউটি অস্বীকার করলে বড় ধরনের শাস্তি হতে পারে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০-এর ৩২ নম্বর ধারায় ভোটের তালিকার প্রস্তুতিতে ভুলের জন্য শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, এই ধারাটি ডিউটি অস্বীকার করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই, বিএলও ডিউটি প্রত্যাখ্যান করলে সরাসরি জেল বা জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কতটা?
শিক্ষকদের নিয়োগকর্তা হল ডিপিএসসি/ডিআই, নির্বাচন কমিশন নয়। তাই, নির্বাচন কমিশন সরাসরি কোনও শিক্ষককে শাস্তি দিতে পারে না। তারা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে। অর্থাৎ, কোনও শিক্ষকের চাকরি বরখাস্ত বা সাসপেন্ড করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই।
শিক্ষকদের অধিকার এবং শিক্ষার ওপর প্রভাব
- শিক্ষার অধিকার আইন (RTE) ২০০৯: এই আইনের ২৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, শিক্ষকদের অ-শিক্ষামূলক কাজে নিয়োগ করা উচিত নয়। শুধুমাত্র জনগণনা, বিপর্যয় মোকাবিলা এবং সংসদ, রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনের মতো কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। বিএলও-র কাজ শিক্ষকদের প্রাথমিক শিক্ষাদানের দায়িত্বে বাধা সৃষ্টি করে।
- ক্ষতিপূরণ ও ছুটি: বিএলও ডিউটির জন্য শিক্ষকদের প্রায়শই ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, এর জন্য তাঁদের ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি বা ওভারটাইম বেতন পাওয়া উচিত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয় না।
- কাজের চাপ: বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা, ভোটার তালিকা তৈরি, আবেদন যাচাই এবং মিটিং-এ যোগদানের মতো অসংখ্য কাজ শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
আগামী পদক্ষেপ: আইনি লড়াই
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এই নিয়মের বিরুদ্ধে একটি বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। অনেক শিক্ষকরা এই মামলায় আবেদনকারী হিসাবে যোগ দিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় এই মামলা কতদূর গড়ায়।