2022 TET Protest: ২০২২ টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীদের মহাআন্দোলন! নিয়োগের দাবিতে উত্তাল হবে কলকাতা!

2022 TET Protest: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি ও মামলার কারণে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগের অভাবে রাজ্যের স্কুলগুলো ধুঁকছে। এই পরিস্থিতিতে, ২০২২ সালের প্রাইমারি TET উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা তাদের ন্যায্য নিয়োগের দাবিতে একজোট হয়েছেন।
শিক্ষক নিয়োগে বিলম্ব এবং তার প্রভাব
গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত থমকে আছে। ২০১৬ সালের SLST নিয়ে আইনি জটিলতা এবং দুর্নীতির অভিযোগের পর থেকে নতুন নিয়োগ সেভাবে হয়নি। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে রাজ্যের স্কুলগুলোর ওপর। শিক্ষক না থাকার কারণে অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী:
- ১১,৫১৫টি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩০-এর কম।
- ৭৪৭টি স্কুল শিক্ষক না থাকার কারণে ছাত্রশূন্য হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি শিশুদের শিক্ষার অধিকারকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে, যা ভারতীয় সংবিধানের একটি মৌলিক অধিকার। যোগ্য শিক্ষকের অভাবে গ্রামের স্কুলগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। অনেক জায়গায় একজন শিক্ষককেই একাধিক ক্লাস নিতে হচ্ছে, যা শিক্ষার মানকে তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে।
২০২২ সালের TET পরীক্ষা এবং তারপর
২০২২ সালের ১১ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া TET পরীক্ষাকে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে অন্যতম স্বচ্ছ পরীক্ষা হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ১০ই মার্চ ফল প্রকাশিত হয় এবং প্রায় দেড় লক্ষ প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। সেই সময়, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রতি বছর দুটি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো হবে এবং কোনো TET উত্তীর্ণ প্রার্থী বেকার থাকবেন না।
কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। ২০২৩ সালের ১১ই আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের রায়ে B.Ed প্রার্থীরা (প্রায় ৯১,৮১৭ জন) প্রাথমিকের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর D.El.Ed এবং NIOS D.El.Ed উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের পথ আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। সরকারের এই উদাসীনতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী।
শিক্ষকদের প্রতিবাদ এবং ভবিষ্যতের ডাক
এই অচলাবস্থা ভাঙতে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, TET উত্তীর্ণ প্রার্থীরা এক বড় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আগামী ১৯শে আগস্ট কলকাতায় এক গণ-আন্দোলন, ‘কলকাতা চলো’ অভিযানের আয়োজন করা হয়েছে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো:
- অবিলম্বে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি।
- পশ্চিমবঙ্গের ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচানো।
- শিশুদের শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করা।
আন্দোলনের আয়োজকরা রাজ্যের সমস্ত যোগ্য TET উত্তীর্ণ প্রার্থীদের, বিশেষ করে সমস্ত ২৩টি জেলা থেকে, এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তাদের বার্তা পরিষ্কার – এই লড়াই শুধু চাকরির জন্য নয়, এই লড়াই পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার লড়াই। এখন দেখার বিষয়, সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা।