Happy Independence Day: স্বদেশী ২.০: ভারতের অর্থনৈতিক জাগরণের নতুন অধ্যায়

Happy Independence Day Swadeshi 2.0: প্রথমেই সকলকে জানাই স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বর্তমানে ভারত এক নতুন অর্থনৈতিক দিশার দিকে এগোচ্ছে, যাকে বলা হচ্ছে “স্বদেশী ২.০”। এর মূল লক্ষ্য ভারতকে শুধুমাত্র একটি উপভোক্তা বাজার থেকে বিশ্বের মঞ্চে একজন প্রধান উৎপাদক এবং উদ্ভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এই নতুন স্বদেশী আন্দোলন ভারতের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে, যা দেশের আত্মনির্ভরতার স্বপ্নকে এক নতুন মাত্রা দিচ্ছে।
স্বদেশী আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯০৫ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দেওয়া। এটি ছিল অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক অস্ত্র। স্বাধীনতার পর, ভারত আমদানি বিকল্প নীতি গ্রহণ করে, যেখানে বিদেশী পণ্যের উপর ভারী কর আরোপ করা হয়। কিন্তু প্রযুক্তি এবং দক্ষতার অভাবে এই নীতি ব্যর্থ হয় এবং ১৯৯১ সালে ভারতকে অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে হাঁটতে হয়। এর ফলস্বরূপ, ভারত বিদেশী পণ্যের জন্য একটি বড় বাজারে পরিণত হয়, কিন্তু দেশীয় উৎপাদন তেমনভাবে এগোতে পারেনি।
স্বদেশী ২.০: নতুন ধারণা
স্বদেশী ২.০ পুরনো ধারণা থেকে অনেকটাই আলাদা। এর মূল ভিত্তি হলো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে, বরং নিজের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। এই নতুন নীতির প্রধান কয়েকটি দিক হলো:
- উৎপাদন ও উদ্ভাবন: স্বদেশী ২.০-এর লক্ষ্য ভারতকে একটি প্রধান উৎপাদনকারী এবং উদ্ভাবক হিসেবে গড়ে তোলা।
- আত্মনির্ভরতা: উচ্চ প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, ভোগ্যপণ্য এবং পরিকাঠামোতে দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলা।
- বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে অংশগ্রহণ: বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং কৌশলগত স্বাধীনতা বজায় রাখা।
- “ভোকাল ফর লোকাল”: “ভোকাল ফর লোকাল”-এর মতো প্রচারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যকে সমর্থন করা।
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং চালিকাশক্তি
সাম্প্রতিক বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সংঘাত ভারতকে তার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোতেও ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে কিছু প্রধান চালিকাশক্তি রয়েছে:
- সরকারি নীতি: “মেক ইন ইন্ডিয়া” (২০১৪), “আত্মনির্ভর ভারত” এবং বিভিন্ন সেক্টরের জন্য প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম।
- অর্থনৈতিক চাপ: প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (FDI) বৃদ্ধি এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলির বিদেশে বিনিয়োগ।
- প্রযুক্তিগত ক্ষমতা: মহাকাশ গবেষণা (ISRO), সেমিকন্ডাক্টর, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), এবং ড্রোন প্রযুক্তিতে ভারতের অগ্রগতি।
ভারতের নতুন পরিচয়: উৎপাদক এবং বিশ্ব আকর্ষণ
ভারত এখন আর শুধুমাত্র বিদেশী কোম্পানির বিক্রির গন্তব্য নয়, বরং একজন রপ্তানিকারক হিসেবেও উঠে আসছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের উপভোক্তা বাজার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর ফলে, বিশ্ব সংস্থাগুলির জন্য “প্রথমে ভারতের জন্য উৎপাদন” নীতি গ্রহণ করা আবশ্যক হয়ে পড়বে। ভারতীয় সংস্থাগুলিও বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ করছে এবং নতুন প্রযুক্তি দেশে ফিরিয়ে আনছে।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ
যদিও স্বদেশী ২.০-এর দিশা সঠিক, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জিডিপিতে উৎপাদনের অংশ ১৬% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করা, আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের উপর নির্ভরতা কমানো এবং পরিকাঠামোগত ঘাটতি পূরণ করা এখন ভারতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, এই নতুন স্বদেশী আন্দোলন ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে, যা দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম। জয় হিন্দ! বন্দেমাতরম! ভারত মাতার জয়।