E20 Fuel: E20 বিতর্ক! আপনার গাড়ির মাইলেজ কি সত্যিই কমে যাচ্ছে? জানুন আসল সত্যি

E20 Fuel: বর্তমানে ভারতে গাড়ির মালিকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে E20 ফুয়েল। সরকার যেখানে পরিবেশ রক্ষা এবং কাঁচা তেল আমদানির খরচ কমানোর জন্য এই নতুন পেট্রোলকে উৎসাহ দিচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাইলেজ কমে যাওয়া এবং গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। চলুন, এই বিতর্কের প্রতিটি দিক বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
E20 ফুয়েল কী?
E20 ফুয়েল হলো এমন একটি পেট্রোল যেখানে ২০% ইথানল এবং ৮০% পেট্রোল মেশানো থাকে। এই ইথানল মূলত আখ, ভুট্টা ইত্যাদির মতো শস্য থেকে তৈরি হয়, যা পরিবেশের জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো বলে মনে করা হয়। ভারত সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে E20 পেট্রোলের ব্যবহার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
সরকারি যুক্তি এবং সুবিধা
সরকার এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের মতে, E20 ফুয়েল ব্যবহারের একাধিক সুবিধা রয়েছে:
- আমদানি হ্রাস: ইথানল দেশে উৎপাদন হওয়ায় বিদেশ থেকে কাঁচা তেল আমদানির পরিমাণ কমবে, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
- কৃষকদের আয় বৃদ্ধি: ইথানল তৈরিতে আখ ও ভুট্টার মতো ফসল ব্যবহৃত হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবেন।
- পরিবেশ সুরক্ষা: ইথানলের দহনে কার্বন মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসের নির্গমন কম হয়, ফলে দূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- উন্নত পারফরম্যান্স: সরকারের দাবি, ইথানলের উচ্চ অকটেন নম্বরের কারণে E20 ফুয়েল ব্যবহারে গাড়ির পারফরম্যান্স ভালো হয় এবং ইঞ্জিন মসৃণভাবে চলে।
সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও অভিযোগ
সরকারি দাবির পরেও, সাধারণ মানুষ E20 ফুয়েল ব্যবহার করে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধান উদ্বেগগুলি হলো:
- মাইলেজ কমে যাওয়া: অনেক ব্যবহারকারীর মতে, E20 পেট্রোল ব্যবহারের ফলে গাড়ির মাইলেজ ১০% থেকে ২০% বা তারও বেশি কমে গেছে। সরকারিভাবে যেখানে ৩-৬% কমার কথা বলা হয়েছে, সেখানে বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর ফলে যাতায়াতের খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।
- ইঞ্জিনের ক্ষতির আশঙ্কা: ইথানল পেট্রোলের থেকে বেশি জল আকর্ষণ করে। পুরনো গাড়িগুলির (২০২৩ সালের আগে তৈরি) ফুয়েল পাম্প, পাইপ বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ ইথানল-প্রতিরোধী না হওয়ায়, সেগুলিতে মরচে পড়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
- বিকল্পের অভাব: গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, ফুয়েল স্টেশনগুলিতে সাধারণ পেট্রোল (E0) বা কম ইথানলযুক্ত পেট্রোলের (E5, E10) কোনো বিকল্প রাখা হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই সবাইকে E20 ফুয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে।
আইনি লড়াই এবং ভবিষ্যৎ
এই সমস্যাগুলিকে সামনে রেখে আইনজীবী অক্ষয় মালহোত্রা সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, E20 বাধ্যতামূলক করা গ্রাহকদের অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং সংস্থাগুলি গাড়ির ক্ষতির জন্য বীমা দিতে অস্বীকার করতে পারে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নির্দেশ দিতে পারে, যেমন – ফুয়েল পাম্পে ইথানলের শতাংশ উল্লেখ করা, পুরনো গাড়ির জন্য বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা, অথবা একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব খতিয়ে দেখা।
সব মিলিয়ে, E20 ফুয়েল নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। একদিকে সরকারের সদিচ্ছা, আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা -এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।