DA Case Update: পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (DA) মামলার চূড়ান্ত শুনানি সুপ্রিম কোর্টে সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর এই শুনানি শেষ হওয়ায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে রায় নিয়ে নতুন করে আশা সঞ্চার হয়েছে। শুনানি শেষে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ এবং তাঁদের আইনজীবীরা জয়ের ব্যাপারে তীব্র আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। শীর্ষ আদালত এই মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
শুনানির মূল বিষয়বস্তু এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
এদিন শীর্ষ আদালতে শুনানি শেষে বিচারপতি রায়দান স্থগিত বা রিজার্ভ রেখেছেন। এর অর্থ হল, আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি শুনেছে এবং এখন চূড়ান্ত রায় লেখার প্রক্রিয়া শুরু করবে। তবে রায় ঘোষণার আগে আরও কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে।
- রাজ্য সরকারের হলফনামা: আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে তাদের লিখিত বক্তব্য বা নোট অফ সাবমিশন জমা দিতে বলা হয়েছে।
- মঞ্চের প্রত্যুত্তর: রাজ্য সরকারের হলফনামা জমা পড়ার পর, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ তার জবাবে একটি প্রত্যুত্তর বা রিজয়েন্ডার ফাইল করার জন্য এক সপ্তাহ সময় পাবে।
- চূড়ান্ত রায়: এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্ট তার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে। অর্থাৎ, রায় পেতে আরও অন্তত তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আইনজীবীদের মূল যুক্তি
রাজ্য সরকার আদালতে দাবি করেছিল যে, ডিএ পাওয়ার অধিকারটি শুধুমাত্র বিভিন্ন সময়ে জারি করা সরকারি মেমোরেন্ডামের উপর নির্ভরশীল, এটি ROPA 2009 থেকে উদ্ভূত নয়। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আইনজীবীরা এই যুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন।
- অধিকারের উৎস সার্ভিস রুল: মঞ্চের আইনজীবীরা স্পষ্টভাবে জানান যে, মহার্ঘ ভাতা পাওয়ার অধিকারের মূল উৎস হল পশ্চিমবঙ্গ সার্ভিস রুল (W.B.S.R.)। এই নিয়ম অনুযায়ী, ডিএ কর্মীদের বেতনেরই একটি অংশ এবং এটি কোনো দয়ার দান নয়।
- AICPI-এর স্বীকৃতি: যখন সরকার কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণের জন্য সর্বভারতীয় মূল্যসূচক (AICPI) মেনে নিয়েছে, তখন সেই সূচক অনুযায়ী ডিএ প্রদান করতেও তারা বাধ্য। মূল্যসূচক বাড়লে ডিএ-ও আনুপাতিক হারে বাড়াতে হবে।
- ভবিষ্যতের দিশা: এই যুক্তি শুধুমাত্র বকেয়া ডিএ মামলার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি ROPA 2019-এর অধীনেও কর্মীদের ডিএ পাওয়ার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে। রাজ্য সরকার ROPA 2019 থেকে ডিএ-এর বিষয়টি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করলেও, সার্ভিস রুল-এর এই যুক্তি ভবিষ্যতেও কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত রাখবে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও মঞ্চের বার্তা
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, “গোটা শুনানি শোনার পরে এটুকু বলতে পারি যে, এই মামলায় আমরাই জিতব।” তিনি আরও জানান যে, মঞ্চের পক্ষে বরিষ্ঠ আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম এর হয়ে নচিকেতা যোশী এবং বিক্রম চ্যাটার্জী ও অভিজিৎ উপাধ্যায়ের মতো আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অকাট্য যুক্তিতেই আদালত প্রভাবিত হয়েছে বলে মঞ্চের সদস্যরা মনে করছেন।
এই মামলার শুনানি শেষ হওয়াটা নিঃসন্দেহে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘ সংগ্রাম ও অপেক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখন সকলেই চূড়ান্ত রায়ের দিকে তাকিয়ে, যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।