India’s Digital Sovereignty: অচল হয়ে যাবে ভারত! যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকা, ‘ডিজিটাল স্বরাজ’ই একমাত্র পথ?

India’s Digital Sovereignty: বর্তমান ডিজিটাল যুগে, আমাদের জীবনযাত্রা অনেকাংশেই আমেরিকান প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা যে সমস্ত ডিজিটাল পরিষেবা ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই আমেরিকান সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই নির্ভরতা আমাদের জীবনকে সহজ করলেও, এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক বিরাট ঝুঁকি। সম্প্রতি গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) ভারতকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছে। তাদের মতে, আমেরিকান সফটওয়্যার, ক্লাউড পরিষেবা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ভারতকে অবশ্যই “ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব” (Digital Sovereignty) অর্জন করতে হবে।
মূল ঝুঁকিগুলো কী কী?
GTRI-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের ডিজিটাল পরিকাঠামো একটি গুরুতর বিপদের সম্মুখীন হতে পারে যদি আমেরিকা কোনো কারণে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সফটওয়্যার ভারতে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা ভেঙে পড়তে পারে।
- পরিষেবা বিভ্রাট: ডিজিটাল পেমেন্ট, ট্যাক্স ফাইলিং এবং বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা, যা আমেরিকান প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল, সেগুলি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- স্মার্টফোনের ওপর প্রভাব: ভারতের প্রায় ৫০ কোটি স্মার্টফোন অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলে। যদি গুগল তার পরিষেবা বন্ধ করে দেয়, তবে এই ফোনগুলির কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
- বিকল্পের অভাব: রাশিয়া বা চিনের মতো দেশগুলো নিজেদের ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে (যেমন – টেলিগ্রাম, উইচ্যাট)। কিন্তু ভারতের কাছে এই মুহূর্তে কোনো দেশীয় বিকল্প নেই, যা আমাদের আরও বেশি অসুরক্ষিত করে তুলেছে।
“ডিজিটাল স্বরাজ মিশন”: সমাধানের পথ
এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য GTRI একটি “ডিজিটাল স্বরাজ মিশন”-এর প্রস্তাব দিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো ভারতের নিজস্ব ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো বহিরাগত শক্তির ওপর আমাদের নির্ভর করতে না হয়।
এই মিশনের অধীনে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে:
- স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা (১-২ বছর): সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ডেটা হোস্ট করার জন্য সার্বভৌম ক্লাউড বাধ্যতামূলক করা এবং মাইক্রোসফটের পরিবর্তে লিনাক্স-ভিত্তিক সিস্টেম চালু করা।
- মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা (৩-৫ বছর): সরকারি দফতরগুলিতে সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করা এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সাইবারসিকিউরিটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
- দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (৫-৭ বছর): প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিদেশি সফটওয়্যারের পরিবর্তে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করা এবং নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষ্য অর্জন করা সহজ নয়। এর জন্য প্রচুর সময়, অর্থ এবং সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। তবে ভারতের মতো একটি দেশের জন্য ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব অর্জন করা শুধুমাত্র একটি বিকল্প নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয়তা। দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য এই পথে হাঁটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।