Teacher Transfer: অবৈধ বদলির শিকার? শিক্ষকের পাশে দাঁড়াল কলকাতা হাইকোর্ট, DPSC-কে কড়া ধমক!

Teacher Transfer: সাম্প্রতিক একটি যুগান্তকারী রায়ে, কলকাতা হাইকোর্ট হুগলি জেলার এক প্রধান শিক্ষকের অবৈধ বদলি এবং পদাবনতির আদেশ খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের একক বেঞ্চের এই রায় জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের (DPSC) স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের প্রতি অবিচারের প্রতিকারই করেনি, বরং রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার গুরুত্বকেও তুলে ধরেছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছেন শ্রী উদয় শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, কামারপুকুর সার্কেলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ৫৯ বছর বয়সী এই শিক্ষক, যিনি ১৯৯৩ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন, তাঁর কর্মজীবনে বিদ্যালয়ের জন্য একাধিক সম্মান বয়ে এনেছেন, যার মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকারের ‘নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার’, ‘শিশুমিত্র পুরস্কার’ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার’।
কিন্তু তাঁর এই কৃতিত্ব এবং অবদানকে উপেক্ষা করে, হুগলি DPSC তাঁকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সহকারী শিক্ষক পদে পদাবনতি ঘটায় এবং অন্য একটি বিদ্যালয়ে বদলি করে দেয়। এই সিদ্ধান্তের পিছনে কিছু অভিযোগকে হাতিয়ার করা হয়েছিল, যার মধ্যে একটি ছিল ছাত্রকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ। যদিও তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন যে, বাস্তবে একজন ছাত্রের অভিভাবক তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন, যার বিরুদ্ধে তিনি স্থানীয় থানায় অভিযোগও দায়ের করেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রায়
মামলাটি আদালতে উঠলে, বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। শুনানিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তা হলো হুগলি DPSC-র আইনগত বৈধতা। আদালত পর্যবেক্ষণ করে যে, ২০১১ সালের পর হুগলি DPSC-র কোনো বৈধ কমিটি গঠিত হয়নি। ২০১৫ সালে নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে, কোনো নতুন নির্বাচন বা সদস্য মনোনয়ন হয়নি। ফলে, বর্তমানে যে কর্তৃপক্ষ DPSC পরিচালনা করছে, তাদের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, আদালত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়:
- অবৈধ কর্তৃপক্ষ: যেহেতু DPSC-র বর্তমান কমিটির কোনো আইনি বৈধতা নেই, তাই তাদের নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্তই বেআইনি। একজন চেয়ারম্যান শুধুমাত্র একটি আইনসম্মতভাবে গঠিত কাউন্সিলের মাধ্যমেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
- বদলি আদেশ বাতিল: আদালত অবিলম্বে ওই শিক্ষকের বদলি এবং পদাবনতির আদেশটি খারিজ করে দেয়।
- পুনর্বহালের নির্দেশ: DPSC-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন ওই শিক্ষককে অবিলম্বে বিদ্যালয়ে তাঁর পুরনো পদে অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়।
DPSC এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশের আবেদন করলেও, আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে।
রায়ের তাৎপর্য
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের জয় নয়, এটি শিক্ষা ব্যবস্থায় লুকিয়ে থাকা অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা। এই রায় প্রমাণ করে যে, কোনো কর্তৃপক্ষই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের সম্মান ও অধিকার সুরক্ষিত করা বিচার ব্যবস্থার অন্যতম দায়িত্ব। আশা করা যায়, এই রায়ের পর রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনে আরও স্বচ্ছতা আসবে এবং DPSC-এর মতো সংস্থাগুলি তাদের কার্যকলাপ পরিচালনায় আরও সতর্ক হবে।