WB DA Case: রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলা এক নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা জমা দিয়েছে, যেখানে ডিএ সংক্রান্ত তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের পক্ষ থেকে মলয় মুখোপাধ্যায় এই হলফনামার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন এবং নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আসুন, এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
মামলার প্রেক্ষাপট ও রাজ্য সরকারের যুক্তি
রাজ্য সরকার তাদের হলফনামায় প্রশ্ন তুলেছে যে, ২০০৮ সাল থেকে ডিএ দেওয়া সত্ত্বেও কেন ২০১৬ সালে কর্মীরা মামলা করলেন। এর উত্তরে কনফেডারেশনের যুক্তি হল, পূর্বতন বাম সরকারের আমলে ডিএ-র বঞ্চনা থাকলেও তা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে বঞ্চনার পরিমাণ আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠায় তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন।
রাজ্য সরকার তাদের হলফনামায় ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া ডিএ-র পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ডিএ-র মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বেড়েছে।
ডিএ ব্যবধানের পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ
মলয়বাবু ডিএ ব্যবধানের তুলনামূলক একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, যা নিচে দেওয়া হলো:
- ১লা এপ্রিল, ২০০৮: রাজ্য সরকারি কর্মীরা ২% ডিএ পেতেন, যখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি ও চেন্নাইয়ের কর্মীরা পেতেন ১২%।
- ১লা এপ্রিল, ২০১০: বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পর্যায়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় ডিএ ৩৫%-এ সমান হয়েছিল।
- তৃণমূল সরকার আসার পর:
- ২০১১: রাজ্যের ডিএ ৪৫%, কেন্দ্রের ৬৫%।
- ২০১৪: রাজ্যের ডিএ ৫৮%, কেন্দ্রের ১০০% (ব্যবধান ৪২%)।
- ২০১৬ (মামলার সময়): রাজ্যের ডিএ ৭৫%, যখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি ও চেন্নাইয়ের কর্মীরা পেতেন ১২৫%। এই বিপুল ব্যবধানের কারণেই কর্মীরা মামলা করতে বাধ্য হন।
ষষ্ঠ বেতন কমিশনের ভুল ব্যাখ্যা?
রাজ্য সরকার দাবি করেছে যে, ১২টি রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না। কনফেডারেশনের মতে, এই তুলনা ষষ্ঠ বেতন কমিশনের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা অবান্তর। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের মামলাটি পঞ্চম বেতন কমিশনের ভিত্তিতে চলছে। সেই সময়ে আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলি কেন্দ্রের নিয়ম মেনেই ডিএ দিত।
শ্রী মুখোপাধ্যায় আরও বলেন যে, রাজ্য সরকার যে রাজ্যগুলির উদাহরণ দিয়েছে (যেমন ছত্তিশগড়, কর্নাটক), তাদের ডিএ-র হার পশ্চিমবঙ্গের (তৎকালীন ১৮%) থেকে অনেক বেশি ছিল, যা রাজ্য সরকার তাদের হলফনামায় উল্লেখ করেনি।
আগামী পদক্ষেপ
কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ খুব শীঘ্রই তাদের পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবে। তারা তাদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিমের সাথে আলোচনা করে সমস্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান আদালতে পেশ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কর্মীদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য এবং তাদের উপর আস্থা রাখার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এই মামলায় ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে তারা আশাবাদী।