TET Mandatory: ২০১০-এর আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক নয়, তামিলনাড়ু সরকারের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা

TET Mandatory: সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ে বলা হয়েছে যে ২০১০ সালের আগে নিযুক্ত শিক্ষকদেরও টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) পাশ করতে হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে তামিলনাড়ু সরকার একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে, যা নিয়ে দেশজুড়ে শিক্ষা মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের মতে, এই নিয়মটি শুধুমাত্র ২০১০ সালের পরে নিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এই পদক্ষেপের ফলে হাজার হাজার অভিজ্ঞ শিক্ষকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এবং তামিলনাড়ুর শিক্ষা ব্যবস্থায় এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
মূল ঘটনাটি কী?
শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ (RTE Act) অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকতার জন্য TET পাশ করা বাধ্যতামূলক। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, যে সমস্ত শিক্ষক ২০১০ সালের আগে নিযুক্ত হয়েছেন এবং যাঁদের চাকরির মেয়াদ এখনও পাঁচ বছরের বেশি বাকি আছে, তাঁদেরও দুই বছরের মধ্যে TET পাশ করতে হবে। এই রায়ের বিরুদ্ধেই তামিলনাড়ু সরকার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনের আবেদন জানিয়েছে।
সরকারের যুক্তি
তামিলনাড়ু সরকারের মতে, এই রায়টি পূর্ববর্তী প্রভাব (retrospective effect) ফেলছে, যা আইনসম্মত নয়। তাদের প্রধান যুক্তিগুলি হলো:
- বৈষম্যমূলক প্রয়োগ: সরকারের বক্তব্য, ২০০৯ সালের RTE আইন কার্যকর হওয়ার আগে যে সমস্ত শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের উপর এই আইন চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। কারণ তাঁদের নিয়োগ সেই সময়ের নিয়ম অনুযায়ী বৈধ ছিল।
- অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন: বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন এমন হাজার হাজার অভিজ্ঞ শিক্ষক এই রায়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সরকারের মতে, এই শিক্ষকেরা ইতিমধ্যেই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন এবং তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
- শিক্ষক সংকট: তামিলনাড়ুতে প্রায় ৪.৫ লক্ষ শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ৩.৯ লক্ষ শিক্ষক TET পাশ করেননি। যদি এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে বাধ্যতামূলকভাবে TET পাশ করতে হয়, তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় সংকট দেখা দিতে পারে। অনেক শিক্ষক চাকরি হারাতে পারেন, যার ফলে স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব দেখা দেবে।
- বিকল্প প্রস্তাব: সরকার এই সমস্যার সমাধানে শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ বা ব্রিজ কোর্সের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে তাঁদের দক্ষতার মান উন্নয়ন করা যায় এবং চাকরিও বজায় থাকে।
আদালতের রায় এবং তার প্রভাব
সুপ্রিম কোর্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার মান উন্নত করা। আদালত মনে করে, TET পরীক্ষা শিক্ষকদের যোগ্যতার একটি ন্যূনতম মাপকাঠি, যা সমস্ত শিক্ষকের জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। তবে এই রায়ের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা বেশ জটিল। একদিকে শিক্ষার মান বজায় রাখার প্রশ্ন, অন্যদিকে হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা।
ভবিষ্যতের পথ
এখন দেখার বিষয়, সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাড়ু সরকারের এই রিভিউ পিটিশনকে কীভাবে গ্রহণ করে। যদি আদালত সরকারের আবেদন মেনে নেয়, তবে ২০১০ সালের আগে নিযুক্ত শিক্ষকেরা স্বস্তি পাবেন। আর যদি রায় বহাল থাকে, তবে রাজ্য সরকারকে একটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। শিক্ষা মহল মনে করছে, এই মামলার রায় শুধুমাত্র তামিলনাড়ু নয়, সারা দেশের শিক্ষা নীতির উপর প্রভাব ফেলবে।