দেশ
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন: নতুন ১৭টি নিয়মে কতটা বদলাবে বিহার তথা ভারতের ভোট ব্যবস্থা? | Election Commission Reforms

Election Commission Reforms: ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে স্বচ্ছতা, নির্ভুলতা এবং ভোটারদের সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৭টি নতুন সংস্কার ও উদ্যোগ ঘোষণা করেছে। এই সংস্কারগুলি বিহারে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং সফল হলে দেশব্যাপী প্রয়োগ করা হবে। এই পদক্ষেপটি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভোটারদের আস্থা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মূল সংস্কারসমূহ
এই সংস্কারগুলি মূলত চারটি প্রধান ক্ষেত্রের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে: ভোটার তালিকা পরিশুদ্ধি, প্রযুক্তিগত সংহতকরণ, উন্নত স্বচ্ছতা এবং ভোটারদের উন্নত সুবিধা ও নিরাপত্তা।
- বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLAs) প্রশিক্ষণ: রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভেল এজেন্টদের এখন থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া, ভোটার তালিকা সংশোধন এবং ফর্ম ১৭সি সংগ্রহ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর ফলে দলগুলির মধ্যে আস্থা বাড়বে এবং বিতর্ক কমবে।
- বুথ লেভেল অফিসারদের (BLOs) প্রশিক্ষণ: বিহারের ৭,০০০-এরও বেশি বুথ লেভেল অফিসার এবং সুপারভাইজারদের নয়াদিল্লিতে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর লক্ষ্য হল ভোটার যাচাইকরণ এবং তালিকা ব্যবস্থাপনাকে মানসম্মত করা।
- পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ: নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী আইন এবং মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিশেষ মডিউল তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
- ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR): ২২ বছর পর বিহারে ভোটার তালিকার ব্যাপক যাচাইকরণ করা হয়েছে, যার ফলে ৭.৪২ কোটি ভোটারের একটি “শুদ্ধ” তালিকা তৈরি হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি দেশব্যাপী প্রয়োগ করা হবে।
- বর্ধিত পারিশ্রমিক এবং সাম্মানিক: বুথ লেভেল অফিসারদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং ইআরও এবং এআরও-দের জন্য নতুন সাম্মানিক চালু করা হয়েছে। এর ফলে কর্মীদের মনোবল ও দক্ষতা বাড়বে।
- এপিক কার্ডের (ভোটার আইডি) বিনামূল্যে এবং সময়মত ডেলিভারি: ভোটার আইডি কার্ড এখন থেকে যেকোনো আপডেটের ১৫ দিনের মধ্যে বিনামূল্যে ডেলিভারি করা হবে এবং প্রতিটি পর্যায়ে এসএমএস ট্র্যাকিংয়ের সুবিধা থাকবে।
- বিএলও-দের জন্য পরিচয়পত্র: স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য বুথ লেভেল অফিসারদের এখন থেকে স্ট্যান্ডার্ড ফটো আইডি কার্ড দেওয়া হবে।
- মোবাইল ডিপোজিট সুবিধা: ভোটের গোপনীয়তা বজায় রেখে ভোটারদের সুবিধার জন্য ভোটকেন্দ্রের বাইরে মোবাইল ফোন জমা দেওয়ার জন্য কাউন্টার স্থাপন করা হবে।
- পরিষ্কার ভোটার তথ্য স্লিপ (VIS): ভোটার তথ্য স্লিপগুলি নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে সিরিয়াল নম্বর, পার্ট নম্বর এবং বুথের বিবরণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে, যা ভোটারদের সনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটিকে সহজ করবে।
- ECINet ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: সমস্ত নির্বাচন কমিশনের অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে একীভূত করে একটি ওয়ান-স্টপ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। এখানে প্রিসাইডিং অফিসাররা প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর ভোটের তথ্য আপলোড করবেন, যা স্বচ্ছতা বাড়াবে।
- ভোটকেন্দ্রের ১০০% ওয়েবকাস্টিং: বিহারের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র লাইভ ভিডিও নজরদারির আওতায় থাকবে, যা অনিয়ম প্রতিরোধ করবে এবং অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি করবে।
- ইভিএম ব্যালটে প্রার্থীদের রঙিন ছবি: ইভিএম ব্যালটে এখন থেকে প্রার্থীদের রঙিন ছবি থাকবে, যা ভোটারদের, বিশেষ করে স্বল্প-সাক্ষর অঞ্চলে, প্রার্থীদের সনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
- মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি: ভোটাররা এখন ভোট কেন্দ্রের বাইরের এলাকা পর্যন্ত মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন, তবে ভোটিং কম্পার্টমেন্টের ভিতরে নয়।
- পোলিং এজেন্ট বুথ: রাজনৈতিক দলগুলি এখন ভোটকেন্দ্র থেকে ১০০ মিটার দূরে তাদের বুথ স্থাপন করতে পারবে, যা দলীয় এজেন্টদের কার্যকলাপের উপর নজরদারি বাড়াবে।
- ভোটার-টু-বুথ অনুপাত এবং বুথের নিয়ম: ভিড় কমাতে প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ১,২০০ জন ভোটার থাকবে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত সহায়ক বুথ তৈরি করা হবে।
- প্রচারণার কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণ: ভোটকেন্দ্রের কাছে লাউডস্পিকার এবং ব্যানারের জন্য নতুন নিয়ম এবং শেষ মুহূর্তের প্রচারণার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একটি শান্ত এবং ন্যায্য ভোটের পরিবেশ তৈরি করবে।
এই সংস্কারগুলি ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে এবং ভোটারদের আস্থা ও অংশগ্রহণ বাড়বে।