পশ্চিমবঙ্গ

Bhaskar Ghosh: শাসকের রোষে ভাস্কর ঘোষ? নির্মীয়মাণ আশ্রম গুঁড়িয়ে দিল বুলডোজার! পাশে থাকার ডাক

Bhaskar Ghosh: ভাস্কর ঘোষ, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক এবং মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) সহ বিভিন্ন আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ, বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তিনি বরাবরই সরব। কিন্তু এবার অভিযোগ উঠেছে যে, সেই প্রতিবাদের জেরেই তাঁর একটি নির্মীয়মাণ আশ্রম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃজনের স্বপ্ন

এক সাক্ষাৎকারে, ধ্বংসস্তূপের উপর বসে থাকা ভাস্কর বাবুকে যখন প্রশ্ন করা হয় এই ভাঙচুরের কারণ সম্পর্কে, তিনি সরাসরি ডিএসপি কর্তৃপক্ষ এবং শাসক দলের মদতপুষ্ট রাজ্য সরকারকে দায়ী করেন। তাঁর কথায়, “ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসে… আমরা সৃজনের স্বপ্ন দেখি। আমি অন্তত দেখি।” তাঁর এই উক্তি বুঝিয়ে দেয় যে, এই ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে সামান্য ভেঙে পড়লেও, তাঁর লড়াইয়ের ইচ্ছা অটুট রয়েছে।

অনাথ শিশুদের জন্য এক স্বপ্নের আশ্রয়

ভাস্কর বাবু জানান যে, এই জায়গাটি ডিএসপি-র একটি ৯৯ বছরের লিজে নেওয়া সম্পত্তি ছিল, যা তিনি ও তাঁর স্ত্রী পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে গ্রহণ করেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল পরমানন্দ মিশনের অধীনে এখানে একটি আশ্রম তৈরি করা। এই আশ্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল অনাথ শিশুদের আশ্রয় দেওয়া, বিশেষ করে তফসিলি জাতি ও উপজাতি (ST/SC) সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রায় ৫৫০-র মতো বাচ্চা আছে, যার মধ্যে ৮৫% সেই কমিউনিটি থেকে আসা।” এই মহৎ কাজের জন্য তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলিতভাবে ২৭ লক্ষ টাকার একটি ব্যক্তিগত লোনও নিয়েছিলেন।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র ও বেআইনি ভাঙচুরের অভিযোগ

ভাস্কর বাবুর অভিযোগ অনুযায়ী, প্রায় দেড় মাস নির্বিঘ্নে আশ্রম নির্মাণের কাজ চলার পরেই শাসক দলের তরফ থেকে বাধা আসতে শুরু করে। তাঁকে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে “মিটমাট” করে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি এই সম্পূর্ণ ভাঙচুরকে একটি বেআইনি এবং পরিকল্পিত চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে আইনি লড়াইয়ের কোনো সুযোগই দেওয়া হয়নি।

  • শুনানির চিঠি দেরিতে: ১২ই সেপ্টেম্বরের একটি চিঠিতে তাঁকে ১৫ই সেপ্টেম্বরের শুনানিতে ডাকা হয়, কিন্তু সেই চিঠি তিনি হাতে পান ৯ই অক্টোবর, অর্থাৎ প্রায় দেড় মাস পরে।
  • ভাঙার নির্দেশ: একইভাবে, ১৬ই সেপ্টেম্বরের একটি ভাঙার নির্দেশ (demolition order) তাঁকে দেওয়া হয় ৩০শে অক্টোবর।
  • অফিসের সময়ের পরে ভাঙচুর: কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই, অফিসের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় বুলডোজার এনে এই ভাঙচুর চালানো হয়।

ভাস্কর বাবু আরও প্রশ্ন তোলেন, “নির্মাণ বেআইনি হলেও, মার্বেলগুলি কী দোষ করলো?” তিনি জানান, আশ্রমে রাখা প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মার্বেল ও গ্রানাইটও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে তাঁর বোনের বাড়ির জন্য আনা গ্রানাইটও ছিল।

“মাথা নত করবো না, লড়াই জারি থাকবে”

এই ঘটনা কি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের জন্য একটি কড়া বার্তা? এই প্রশ্নের উত্তরে ভাস্কর বাবু মনে করেন, “বিষয়টা তো তাই।” তাঁর মতে, তাঁকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিয়ে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়াই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।

তবে তিনি স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভাস্কর ঘোষ কারোর কাছে… মাথা নত করবার জন্য জন্মায়নি।” তিনি জানান যে, কাটমানি বা সিন্ডিকেটের কাছে মাথা নত করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর মতে, এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে তাঁদের আন্দোলন “শাসকের মেরুদণ্ডে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিচ্ছে।” তিনি দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন, “লড়াই জারি আছে, জারি থাকবে।”

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button