স্ত্রীর নামে সম্পত্তি কিনলে ট্যাক্স বাঁচবে? জানুন আয়কর বিভাগের আসল নিয়ম, নাহলে বড় বিপদ!
Property in Wife’s Name: অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীরা সম্পত্তি কেনার সময় স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করার কথা ভাবেন। এর একটি বড় কারণ হল স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড় পাওয়া। যেমন, মহারাষ্ট্রে মহিলাদের নামে সম্পত্তি কিনলে স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফিতে ১ শতাংশ ছাড় মেলে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর সাথে জড়িত আয়করের নিয়মগুলি জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি এক ব্যক্তি এমনই একটি প্রশ্ন করেছিলেন, যেখানে তিনি তার স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান, যার সম্পূর্ণ টাকা তিনি নিজের আয় থেকে দেবেন। তার স্ত্রী উপার্জন করেন না এবং আয়করও দেন না। আসুন, বিশেষজ্ঞের মতামত অনুযায়ী জেনে নেওয়া যাক এই ধরনের লেনদেনের ট্যাক্সের প্রভাব কী হতে পারে।
স্ত্রীর নামে সম্পত্তি কেনা: উপহারের নিয়ম
যখন স্বামী নিজের উপার্জন থেকে সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে কোনো সম্পত্তি কেনেন, তখন আয়করের নিয়ম অনুযায়ী এই লেনদেনটিকে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দেওয়া ‘উপহার’ (Gift) হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমান আয়কর আইন অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি এক আর্থিক বছরে সমস্ত উৎস থেকে মোট ৫০,০০০ টাকার বেশি মূল্যের উপহার পান, তবে সম্পূর্ণ অর্থই প্রাপকের আয় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তার ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হয়।
তবে এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু আত্মীয়ের কাছ থেকে পাওয়া উপহার করমুক্ত হয়, এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। তাই, স্বামী যখন স্ত্রীর নামে সম্পত্তি কেনার জন্য অর্থ প্রদান করেন, তখন স্ত্রীর উপর কোনো করের দায়ভার বর্তায় না। স্ত্রীকে এই অর্থের জন্য কোনো আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করতে হবে না।
ক্লাবিং প্রভিশন: আসল ট্যাক্সের ফাঁদ
উপহারের উপর স্ত্রীর কর ছাড় থাকলেও, এখানেই বিষয়টি শেষ হয়ে যায় না। আয়কর আইনের ৬৪ নম্বর ধারার অধীনে ‘ক্লাবিং প্রভিশন’ (Clubbing Provision) সক্রিয় হয়ে যায়। এই নিয়ম অনুযায়ী, উপহার দেওয়া সম্পত্তি থেকে যদি কোনো আয় হয়, তবে সেই আয় উপহারদাতার (এক্ষেত্রে স্বামীর) আয়ের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে এবং করের দায়ভারও স্বামীর উপরেই থাকবে। অর্থাৎ, সম্পত্তিটি স্ত্রীর নামে থাকলেও, এর থেকে হওয়া যেকোনো আয় স্বামীর আয় হিসেবেই গণ্য হবে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনবিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্যাক্সের প্রভাব
আসুন দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই ক্লাবিং প্রভিশনের প্রভাব কেমন হবে:
ভাড়া থেকে আয় (Rental Income): যদি সম্পত্তিটি ভাড়া দেওয়া হয়, তবে প্রাপ্ত ভাড়া স্ত্রীর আয় হিসেবে গণ্য হবে না। এই অর্থ সরাসরি স্বামীর মোট আয়ের সাথে যুক্ত হবে এবং স্বামীর ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হবে।
সম্পত্তি বিক্রি থেকে লাভ (Capital Gains): যদি ভবিষ্যতে সম্পত্তিটি বিক্রি করা হয় এবং তা থেকে কোনো লাভ (Capital Gains) হয়, তবে সেই লাভও স্বামীর আয় হিসেবেই গণ্য হবে। এর উপর প্রযোজ্য ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স স্বামীকে তার আয়কর রিটার্নে দেখাতে হবে এবং প্রদান করতে হবে।
নিজেদের বসবাসের জন্য (Self-occupied): যদি সম্পত্তিটি স্বামী-স্ত্রী নিজেদের বসবাসের জন্য ব্যবহার করেন, তবে এটি থেকে কোনো প্রত্যক্ষ আয় হয় না। যেহেতু কোনো আয় নেই, তাই ক্লাবিং প্রভিশন প্রয়োগের প্রশ্নই ওঠে না। এই ক্ষেত্রে কোনো করের দায়ভার তৈরি হবে না।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ক্লাবিং-এর নিয়ম বিবাহিত জীবন স্থায়ী থাকা পর্যন্ত প্রযোজ্য থাকবে। এমনকি যদি সেই সম্পত্তি বিক্রি করে অন্য কোনো সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়, তাহলেও নতুন সম্পত্তি থেকে হওয়া আয়ের উপর এই নিয়ম কার্যকর হবে। সুতরাং, স্ট্যাম্প ডিউটি বাঁচানোর জন্য স্ত্রীর নামে সম্পত্তি কিনলেও, তার থেকে হওয়া আয়ের করের বোঝা স্বামীর উপরেই থাকে।