32000 Teachers Case: ৩২ হাজার শিক্ষক মামলার রায় রিজার্ভ! শুনানিতে কার পক্ষে কোন যুক্তি? জানুন বিস্তারিত
32000 Teachers Case: কলকাতা হাইকোর্টে ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল মামলার আজ ২১তম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে এবং আদালত তার রায় রিজার্ভ রেখেছে। অর্থাৎ, এই মামলার চূড়ান্ত রায় কিছুদিন পরে ঘোষণা করা হবে। তবে, এই দীর্ঘ শুনানিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা কী কী যুক্তি তুলে ধরেছেন, তা নিয়ে চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে।
আজকের শুনানিতে প্রায় সমস্ত আইনজীবীরাই অল্প সময়ের জন্য নিজেদের বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছেন। শুনানির মূল বিষয়গুলি ছিল সিবিআই চার্জশিট, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং চাকরি বাতিলের এক্তিয়ার।
শুনানিতে উঠে আসা প্রধান যুক্তি
বিভিন্ন আইনজীবীর সওয়াল-জবাবে শুনানিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। নীচে কিছু উল্লেখযোগ্য যুক্তি তুলে ধরা হলো:
বিচারকের ভূমিকা ও সাক্ষ্যগ্রহণ: বরিষ্ঠ আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা অনলাইন শুনানিতে অংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যে, বিচারক নিজেই এখানে প্রসিকিউটরের ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তিনি বলেন, মোট আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ৪.৩১% প্রার্থীকে ডেকে তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হয়েছে, যা স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনসিবিআই চার্জশিট: মীনাক্ষী অরোরা আরও বলেন যে, সিবিআই-এর চার্জশিটে এই ৩২,০০০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়নি। এছাড়াও, ২৬৯ জন এবং অন্যান্য কয়েকজনের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে এই ৩২,০০০ জনের কোনো সম্পর্ক নেই।
ত্রিপুরা মামলার ভিন্নতা: গত শুনানিতে ত্রিপুরায় শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রসঙ্গ উঠেছিল। মীনাক্ষী অরোরা স্পষ্ট করেন যে, ত্রিপুরার মামলাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। সেখানে এনসিটিই (NCTE)-এর নির্দেশিকা এবং সাংবিধানিক নিয়ম মানা হয়নি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল: আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, যে সমস্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তারা প্রত্যেকেই ২০১৯ সালের মধ্যে তাদের ডি.এল.এড (D.El.Ed) কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মূল মামলাকারীরা চাকরি বাতিলের আবেদন করেননি, বরং তারা নিজেদের জন্য নিয়োগ চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, এই ৩২,০০০ চাকরির সঙ্গে প্রায় দেড় লক্ষ পরিবারের জীবন-জীবিকা জড়িত, তাই মানবিক দিকটিও বিবেচনা করা উচিত।
প্যানেল প্রকাশ এবং অন্যান্য মামলা: আইনজীবী অভ্রতোষ মজুমদার বলেন, সফল প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল এবং সেটিই ছিল প্যানেল। তিনি আরও বলেন যে, মামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলিতে অংশ নিয়ে বর্তমানে চাকরি করছেন এবং তারাই এখন ২০১৬-এর নিয়োগকে অবৈধ বলছেন।
প্যারা-টিচারদের নম্বর বিভাজন: প্যারা-টিচারদের পক্ষ থেকে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন যে, অ্যাপটিটিউড টেস্টের পরিবর্তে তাদের যে অভিজ্ঞতার নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেখানে ভগ্নাংশ (fraction) আসা স্বাভাবিক। কারণ, একজন সাড়ে চার বছর বা চার বছর তিন মাস কাজ করলে, তার চাকরির অভিজ্ঞতা ভগ্নাংশেই গণনা হবে।
শুনানির শেষে অর্ডার রিজার্ভ রাখা হয়েছে। আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরা মনে করছেন যে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি সুরক্ষিত থাকবে এবং বঞ্চিতদের মধ্যে কিছুজন চাকরি পেতে পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালতের রায়ের পরেই জানা যাবে।