Real Estate Investment: ফ্ল্যাট কিনবেন না ভাড়া নেবেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শে জানুন বিনিয়োগের সেরা কৌশল
Real Estate Investment: বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে নিজের একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকা এক আজন্মলালিত স্বপ্ন। কিন্তু বর্তমানের আকাশছোঁয়া দাম এবং অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে অনেকেই দ্বিধান্বিত—মাসিক কিস্তি (EMI) দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা লাভজনক, নাকি ভাড়ায় থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ? এই প্রতিবেদনে আমরা বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট কেনা বনাম ভাড়া নেওয়া এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করব।
ইএমআই (EMI) বনাম ভাড়া: কোনটি আপনার জন্য সঠিক?
ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের আর্থিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার ধরণ বিচার করা অত্যন্ত জরুরি। এটি আবেগ দিয়ে নয়, বরং বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে নেওয়া উচিত।
- আয়ের সাথে ইএমআই-এর সামঞ্জস্য: বিশেষজ্ঞরা একটি থাম রুল (Thumb Rule) অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। আপনার মাসিক ইএমআই যেন কোনোভাবেই মোট মাসিক আয়ের ২৫-৩০% এর বেশি না হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনার মাসিক আয় যদি ১ লক্ষ টাকা হয়, তবে ইএমআই ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। এর বেশি হলে ভবিষ্যতে আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে।
- ভাড়া নেওয়ার সুবিধা: যাদের চাকরি বদলিযোগ্য (Transferable Job) বা ভবিষ্যতে অন্য শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তাদের জন্য ভাড়ায় থাকা বেশি সুবিধাজনক। এতে বড় অংকের ঋণের বোঝা থাকে না এবং সহজেই বাসস্থান পরিবর্তন করা যায়।
- ভাড়ার অসুবিধা: তবে ভাড়াবাড়িতে কিছু অনিশ্চয়তাও থাকে। যেমন, প্রতি ১১ মাস অন্তর চুক্তি নবায়ন, আকস্মিক ভাড়া বৃদ্ধি, বা বাড়িওয়ালার ইচ্ছামত বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার চাপ।
বিনিয়োগ হিসেবে রিয়েল এস্টেট: লাভ না ক্ষতি?
অনেকেই ফ্ল্যাট কেনাকে একটি লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন। তবে এক্ষেত্রে ‘রেন্টাল ইল্ড’ (Rental Yield) বা ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয়ের হিসাব বোঝা জরুরি।
- রেন্টাল ইল্ডের হিসাব: ভারতে আবাসিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে বার্ষিক ভাড়ার আয় সাধারণত সম্পত্তির মোট মূল্যের ৩% থেকে ৬% হয়ে থাকে। অথচ, হোম লোনের সুদের হার প্রায় ৮-৯%। অর্থাৎ, ব্যাংককে আপনি যে পরিমাণ সুদ দিচ্ছেন, তার চেয়ে ভাড়া থেকে আয় অনেক কম। তাই শুধুমাত্র ভাড়ার আশায় লোন নিয়ে ফ্ল্যাট কেনা আর্থিক দিক থেকে লাভজনক নাও হতে পারে।
- বিনিয়োগের সীমা: এইচডিএফসি (HDFC)-র প্রতিষ্ঠাতার মতে, একজন ব্যক্তির বার্ষিক আয়ের ৫ গুণের বেশি মূল্যের সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। অর্থাৎ, আপনার বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ টাকা হলে, ৫০ লক্ষ টাকার বেশি দামের ফ্ল্যাট কেনা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
অবসরকালীন পরিকল্পনা এবং রিয়েল এস্টেট
অনেকেই অবসরের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF) বা গ্র্যাচুইটির টাকা দিয়ে বাড়ি কেনার কথা ভাবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অবসরের পর মোট তহবিলের ৩০%-এর বেশি রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ রিয়েল এস্টেট একটি ‘ইলিকুইড অ্যাসেট’ (Illiquid Asset), যা জরুরি প্রয়োজনে চটজলদি বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া কঠিন।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনস্মার্ট বিনিয়োগ: জিরো ইএমআই (Zero EMI) কৌশল
যাদের কাছে এককালীন বড় অংকের টাকা আছে, তারা ‘জিরো ইএমআই’ কৌশলের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কিনতে পারেন। ধরা যাক, আপনি ১ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট কিনবেন এবং আপনার কাছে পুরো টাকাই আছে। এক্ষেত্রে পুরো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট না কিনে, ৫০ লক্ষ টাকা ডাউন পেমেন্ট করুন এবং বাকি ৫০ লক্ষ টাকার লোন নিন। হাতে থাকা বাকি ৫০ লক্ষ টাকা কোনো ভালো মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে সেখান থেকে ‘সিস্টেমেটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান’ (SWP) চালু করুন। এই SWP থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে আপনার লোনের ইএমআই শোধ হয়ে যাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আপনার মূলধনও বৃদ্ধি পাবে।
অল্প পুঁজিতে বিনিয়োগ: আরইআইটি (REITs)
যাদের বড় অঙ্কের পুঁজি নেই, তাদের জন্য ‘রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট’ (REITs) একটি ভালো বিকল্প। এর মাধ্যমে ৫০০ বা ১০০০ টাকা দিয়েও শেয়ার বাজারের মতো রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা যায় এবং ভাড়ার আয় থেকে ডিভিডেন্ড পাওয়া সম্ভব।
ফ্ল্যাট কেনা হোক বা ভাড়া নেওয়া, প্রতিটি সিদ্ধান্তের পিছনেই সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা থাকা জরুরি। আবেগের বশবর্তী না হয়ে, নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আর্থিক সক্ষমতা বিচার করে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই এই পথে এগোনো উচিত।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো রকম বিনিয়োগ করার আগে অনুগ্রহ করে একজন প্রত্যয়িত আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করুন।