Labour Codes 2025: ঐতিহাসিক ঘোষণা! ২১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে দেশে চালু ৪টি লেবার কোড, কর্মীদের বেতন ও সুরক্ষায় বিরাট বদল
Labour Codes 2025: ভারত সরকার একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঘোষণা করেছে যে, আগামী ২১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে দেশে ৪টি নতুন লেবার কোড বা শ্রম বিধি কার্যকর হতে চলেছে। এই চারটি কোড হলো— বেতন বিধি ২০১৯ (Code on Wages, 2019), শিল্প সম্পর্ক বিধি ২০২০ (Industrial Relations Code, 2020), সামাজিক সুরক্ষা বিধি ২০২০ (Code on Social Security, 2020) এবং পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কাজের শর্তাবলী বিধি ২০২০ (OSHWC Code, 2020)। এই নতুন নিয়মগুলি চালু হওয়ার ফলে ২৯টি পুরনো শ্রম আইন বাতিল হয়ে যাবে এবং ভারতের শ্রম ব্যবস্থায় এক আমূল পরিবর্তন আসবে। মোদী সরকারের মতে, এই সংস্কার ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে কর্মীদের সুরক্ষা এবং শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পুরনো বনাম নতুন শ্রম ব্যবস্থা: কী কী পরিবর্তন আসছে?
স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসা বহু পুরনো ও জটিল আইনগুলি বর্তমান অর্থনীতির সাথে তাল মেলাতে পারছিল না। নতুন লেবার কোডগুলি সেই সমস্যা দূর করে কর্মীদের জন্য আরও স্বচ্ছ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করবে। নিচে পুরনো এবং নতুন ব্যবস্থার একটি তুলনামূলক চিত্র দেওয়া হলো:
| বিষয় | লেবার রিফর্মের আগে | লেবার রিফর্মের পরে |
|---|---|---|
| নিয়োগের প্রমাণ (Appointment Letter) | নিয়োগপত্র বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না। | সকল কর্মীকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর ফলে চাকরির নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বাড়বে। |
| সামাজিক সুরক্ষা (Social Security) | সীমিত কভারেজ ছিল। | গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীসহ (যেমন অনলাইন ডেলিভারি পার্টনার) সকল কর্মী সামাজিক সুরক্ষা, পিএফ (PF) এবং ইএসআইসি (ESIC)-এর সুবিধা পাবেন। |
| ন্যূনতম মজুরি (Minimum Wages) | শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু শিল্পের কর্মীরা পেতেন। | আইন অনুযায়ী সকল কর্মীর ন্যূনতম মজুরি পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। |
| স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Health Check-up) | মালিকপক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না। | ৪০ বছরের বেশি বয়সি সকল কর্মীর জন্য বছরে একবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো নিয়োগকর্তার জন্য বাধ্যতামূলক। |
| বেতন প্রদান (Timely Wages) | সময়মতো বেতন দেওয়ার কোনো কড়া আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না। | নিয়োগকর্তাদের সময়মতো বেতন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা কর্মীদের আর্থিক দুশ্চিন্তা কমাবে। |
| মহিলাদের কর্মসংস্থান | রাতের শিফটে এবং কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মহিলাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। | মহিলারা এখন রাতের শিফটে এবং সমস্ত ধরণের কাজে (খনি সহ) যোগ দিতে পারবেন, তবে তাদের সম্মতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। |
বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীদের জন্য বিশেষ সুবিধা
নতুন লেবার কোড কার্যকর হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়ি (Fixed-Term Employees)
- স্থায়ী কর্মীদের মতোই ছুটি, চিকিৎসা এবং সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পাবেন।
- আগে গ্র্যাচুইটি পাওয়ার জন্য ৫ বছর কাজ করতে হতো, এখন মাত্র ১ বছর কাজ করলেই গ্র্যাচুইটি পাওয়া যাবে।
- স্থায়ী কর্মীদের সমান বেতন পাবেন।
২. গিগ এবং প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কার (Gig & Platform Workers)
- ভারতে প্রথমবারের মতো ‘গিগ ওয়ার্কার’ এবং ‘প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কার’-দের আইনি সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
- অ্যাগ্রিগেটরদের (যেমন অ্যাপ-ভিত্তিক কোম্পানি) তাদের বার্ষিক টার্নওভারের ১-২% অথবা গিগ কর্মীদের প্রদেয় অর্থের ৫% সামাজিক সুরক্ষার জন্য জমা দিতে হবে।
- আধার-সংযুক্ত ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বরের মাধ্যমে তারা যেকোনো রাজ্যে বসেই কল্যাণমূলক সুবিধা পাবেন।
৩. মহিলা কর্মী
- লিঙ্গ বৈষম্য আইনত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সমান কাজের জন্য সমান বেতন নিশ্চিত করা হয়েছে।
- অভিযোগ প্রতিকার কমিটিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- মহিলা কর্মীদের ‘পরিবার’-এর সংজ্ঞায় শ্বশুর-শাশুড়িকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
৪. অসংগঠিত ও অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মী
- বিড়ি ও সিগার শ্রমিক: দিনে কাজের সময় ৮-১২ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা ফিক্সড করা হয়েছে। ওভারটাইমের জন্য দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে।
- চাষবাস ও প্ল্যান্টেশন: ১০ জনের বেশি কর্মী থাকা বাগানগুলোতেও এখন লেবার কোড প্রযোজ্য হবে। শ্রমিকদের ও তাদের পরিবারের জন্য ইএসআই (ESI) সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
- অডিও-ভিজ্যুয়াল ও মিডিয়া: সাংবাদিক, ডাবিং আর্টিস্ট এবং স্টান্ট পার্সনরাও এখন পূর্ণাঙ্গ আইনি সুবিধা ও নিয়োগপত্র পাবেন।
সরকারের এই উদ্যোগের ফলে মালিকপক্ষের জন্য ‘কমপ্লায়েন্স বাডেন’ বা আইনি জটিলতা কমবে, কারণ এখন একাধিক রেজিস্ট্রেশনের বদলে একটি মাত্র লাইসেন্স ও রিটার্ন জমা দিলেই হবে। এটি ভারতের কর্মসংস্থান এবং শিল্প উভয়কেই শক্তিশালী করবে।