চাকরি

SSC Recruitment: এসএসসি নিয়োগে জালিয়াতি! শিক্ষক নিয়োগের যাচাই পর্বে ধরা পড়ল ৩০০-র বেশি ভুয়ো প্রার্থী, কড়া পদক্ষেপ কমিশনের

WBSSC Recruitment: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WBSSC) দ্বারা পরিচালিত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। গত ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া নথি যাচাই বা ভেরিফিকেশন পর্বে মাত্র চার দিনের মধ্যেই বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর আবেদনে গরমিল পাওয়া গিয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৩০০-রও বেশি এমন আবেদনকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা চাকরি পাওয়ার আশায় ভুয়ো বা ভুল তথ্য জমা দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কমিশন কঠোর মনোভাব পোষণ করছে।

আবেদনের তথ্যে বড়সড় গরমিল ও জালিয়াতি

এসএসসির (SSC) প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে যে, বহু প্রার্থী তাদের আবেদনপত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য পেশ করেছেন। এই গরমিলগুলি মূলত তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে:

  • জাতিগত শংসাপত্র (Caste Certificate): বহু প্রার্থী তাদের জাতিগত শংসাপত্রে জালিয়াতি করেছেন বা ভুল তথ্য দিয়েছেন।
  • পরীক্ষার নম্বর (Exam Marks): কেউ কেউ নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে দেখিয়েছেন।
  • কাজের অভিজ্ঞতা (Work Experience): সবথেকে বেশি কারচুপি নজরে এসেছে অভিজ্ঞতার শংসাপত্রের ক্ষেত্রে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, “ভুয়ো তথ্য দিয়ে ঠিক কত জন আবেদন করেছেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৩০০-এরও বেশি প্রার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের নথি যাচাইয়ের সময় নানা গরমিল ধরা পড়েছে।”

অভিজ্ঞতার শংসাপত্র নিয়ে জালিয়াতির নতুন ছক

২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল হওয়ার পর, আদালতের নির্দেশে যে সমস্ত ‘যোগ্য’ চাকরিহারা প্রার্থীরা এবার নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থার কথা জানিয়েছিল। পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাঁদের অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ঠিক এই জায়গাটিতেই বড়সড় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

নিয়ম অনুযায়ী, পুরনো স্কুলের কাজের অভিজ্ঞতা প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধানশিক্ষকের লেটার প্যাডে লিখিত এবং স্বাক্ষরিত শংসাপত্র জমা দিতে হয়। যাচাই পর্বে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু প্রার্থীর জমা দেওয়া নথিতে প্রধানশিক্ষকের নকল স্বাক্ষর বা জাল সই রয়েছে। এই বিষয়টি কমিশনের আধিকারিকদের নজরে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

কমিশনের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অনলাইন আবেদনের সময় অনেকেই তথ্য ভুল জমা দিয়েছিলেন। সে সব তথ্যই যাচাই করা হচ্ছে। তথ্য ভুল হলে, এমনিতেই আর যোগ্যতা থাকবে না। সকলকে বাতিল করার প্রয়োজন হবে না।” অর্থাৎ, যারা ভুল তথ্য দিয়েছেন, তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়বেন।

অন্যদিকে, ‘যোগ্য’ চাকরিহারা প্রার্থী সুমন বিশ্বাস এই ঘটনায় কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “এত প্রার্থী ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করেছিলেন। ফর্ম পূরণের সময়ই আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল কমিশনের। তবে আমাদের দাবি, ‘যোগ্য’রা যেন কেউ বঞ্চিত না হন।”

যাচাই প্রক্রিয়ার বর্তমান স্থিতি

শনিবার পর্যন্ত মোট ছয়টি বিষয়ের নথি যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নিচে একটি তালিকার মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া বিষয়গুলি তুলে ধরা হলো:

ক্রমিক নংবিষয় (Subject)
বাংলা
ইংরেজি
ইতিহাস
বাণিজ্য (Commerce)
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
কম্পিউটার সায়েন্স

এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগের (Science subjects) বিষয়গুলির যাচাইকরণ বাকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী দিনে বিজ্ঞানের বিষয়গুলির নথি যাচাই শুরু হলে এই ভুয়ো প্রার্থীদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। কমিশন প্রতিটি আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছে যাতে কোনো অযোগ্য প্রার্থী অন্যায্য সুবিধা না পায়।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button