India Russia Summit: মোদী-পুতিন বৈঠকে সিলমোহর ভিশন ২০৩০-এ, সস্তায় তেল ও মিসাইল নিয়ে বড় ঘোষণা
India Russia Summit: বিশ্ব রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভারত ও রাশিয়ার ২৩তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। আমেরিকার মসনদে ক্ষমতার পালাবদল এবং ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ভ্লাদিমির পুতিনের এই ভারত সফর ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রুশ প্রেসিডেন্টের এই হাই-প্রোফাইল বৈঠকে আগামী দিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রূপরেখা বা ‘ভিশন ২০৩০’ তৈরি করা হয়েছে। দুই রাষ্ট্রনেতাই একমত হয়েছেন যে, বিশ্বের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব ‘ধ্রুবতারা’র মতোই অটুট থাকবে।
ভিশন ২০৩০ এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা
এই শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল ভারত ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। দুই দেশই ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। শুধুমাত্র চিরাচরিত বাণিজ্যে আটকে না থেকে এবার এনার্জি, পেট্রোকেমিক্যালস, হাই-টেকনোলজি, মহাকাশ গবেষণা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মতো আধুনিক ক্ষেত্রগুলিতেও একে অপরের হাত ধরার অঙ্গীকার করেছে দুই বন্ধু রাষ্ট্র।
প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় সিদ্ধান্ত
বৈঠকে প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি ক্ষেত্র নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, অপরিশোধিত তেল, এলএনজি (LNG) এবং সারের সরবরাহ আগের মতোই অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমি দুনিয়ার চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই ভারত তার এনার্জি সিকিউরিটি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় প্রযুক্তি হস্তান্তর বা টেকনোলজি ট্রান্সফারে সম্মতি জানিয়েছে রাশিয়া।
নিচে এই সম্মেলনের প্রধান চুক্তি এবং সিদ্ধান্তগুলির একটি তালিকা দেওয়া হলো:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন| খাত/বিষয় | নেওয়া সিদ্ধান্ত ও বিবরণ |
|---|---|
| প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম | এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের বাকি অংশ ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে ভারতে পৌঁছাবে। এছাড়া স্পেয়ার পার্টস ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করবে রাশিয়া। |
| জ্বালানি নিরাপত্তা | রাশিয়া ভারতকে নিরবচ্ছিন্নভাবে অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ করবে। |
| পর্যটন সুবিধা | রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য ভারত ৩০ দিনের ‘ফ্রি ই-টুরিস্ট ভিসা’ চালু করার ঘোষণা করেছে। |
| শ্রমিক নিয়োগ | রাশিয়ায় দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে বৈধ পথে কর্মী পাঠানোর আইনি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। |
ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান
বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, ভারত এই ইস্যুতে কখনওই ‘নিরপেক্ষ’ নয়, বরং ভারত সর্বদা ‘শান্তির পক্ষে’। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন, যা রুশ প্রেসিডেন্ট স্বাগত জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ দমনে দুই দেশ একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানে সম্মত হয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, এই বৈঠক প্রমাণ করে দিল যে ভূ-রাজনৈতিক চাপের মুখেও ভারত তার কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য বা স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি বজায় রাখতে সক্ষম।