Primary Teacher Recruitment: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: সুপ্রিম কোর্টের বড় নির্দেশ, ২০-২২ ডিএলএড প্রার্থীদের জট কাটল?
Primary Teacher Recruitment: পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (WBBPE) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতার অবসান ঘটাতে আবারও কড়া অবস্থান নিল সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, বিশেষত ২০-২২ সেশনের ডিএলএড (D.El.Ed) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল মহাশয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি আদালত অবমাননার (Contempt of Court) মামলার শুনানিকালে বিচারপতিরা এই নির্দেশ দেন, যা রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।
মামলার প্রেক্ষাপট ও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ
এই মামলাটির সূত্রপাত হয় গত ৪ঠা এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায়কে কেন্দ্র করে। সেই সময় সর্বোচ্চ আদালত ২০-২২ সেশনের ডিএলএড প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্যকর না হওয়ায় সুখেন্দু নস্কর বনাম গৌতম পাল মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটির ডায়েরি নম্বর ৬৪২০/২০২৫। মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পর্ষদ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অকারণে বিলম্ব করছে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
বিচারপতি পি.এস. নরসিমা এবং অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এই মামলায় বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সহায়ক হবে:
- পূর্ববর্তী রায় কার্যকর করা: আদালত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছে যে, গত ০৪/০৪/২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, পর্ষদকে তা অবিলম্বে মেনে চলতে হবে এবং কার্যকর (Comply) করতে হবে।
- বিলম্বের কারণ ও যৌক্তিকতা: ২০-২২ সেশনের ডিএলএড প্রার্থীদের পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশে যে দেরি হয়েছিল, তাকে আদালত ‘অবৈধ’ বা ‘Illegality’ বলে গণ্য করেনি। আদালতের মতে, কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে সেই সময় একটি ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশন’ বা অসাধারণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এই বিলম্বের কারণে প্রার্থীদের নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
- নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বৈধতা: ২১শে অক্টোবর, ২০২২ তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (Recruitment Notification) প্রকাশ করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট সেটিকে সম্পূর্ণ বৈধ বলে সিলমোহর দিয়েছে। আদালত উল্লেখ করেছে যে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই বিজ্ঞপ্তি বৈধ এবং এটি চ্যালেঞ্জ করে কেউ আদালতে আসেনি।
পর্ষদকে কড়া নির্দেশ: অবিলম্বে নিয়োগ শুরু
শুনানি চলাকালীন আদালত পর্ষদকে কড়া ভাষায় নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে (Immediately) এবং দ্রুততার সাথে (Expeditiously) নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যায়। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্ট যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর কোনও গড়িমসি বরদাস্ত করা হবে না।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনপরবর্তী পদক্ষেপ ও শুনানির দিনক্ষণ
সুপ্রিম কোর্ট প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছে একটি কাউন্টার এফিডেভিট (Counter Affidavit) জমা দেওয়ার জন্য। এই হলফনামায় পর্ষদকে জানাতে হবে যে আদালতের নির্দেশের পর তারা নিয়োগের বিষয়ে ঠিক কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ০৯/০১/২০২৬ তারিখে। ওই দিন পর্ষদকে তাদের গৃহীত পদক্ষেপের রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে।
এই নির্দেশের ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা ২০-২২ সেশনের ডিএলএড প্রার্থীদের নিয়োগের পথ অনেকটাই প্রশস্ত হলো বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।