দেশ

Aadhaar Voting Rights: আধার থাকলেই কি ভোটাধিকার? সুপ্রিম কোর্টের কড়া প্রশ্নে বিপাকে বিরোধীরা!

Aadhaar Voting Rights: সারা দেশে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নতুন ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে চলা বিতর্কের মাঝেই সুপ্রিম কোর্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আধার কার্ড থাকলেই কি একজন ব্যক্তি ভারতের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য? এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তরে দেশের শীর্ষ আদালত যে মন্তব্য করেছে, তা ইলেকশন কমিশন এবং বিরোধী দল উভয়ের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ‘স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন’ (SIR) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা পিটিশনের শুনানিকালে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, আধার কার্ড কখনোই নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হতে পারে না।

বিষয়টি আসলে কী?

ভারতের নির্বাচন কমিশন বা ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া বর্তমানে দেশজুড়ে ভোটার তালিকা বিশুদ্ধকরণ করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন’ (SIR)। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটার তালিকা থেকে ভুয়া বা ডুপ্লিকেট নাম বাদ দেওয়া এবং তালিকাটি আপডেট করা।

তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে:

  • বিরোধীদের আপত্তি: পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের মতো রাজ্যের সরকার ও বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে যে, এই তালিকা সংশোধনের নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়ের ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
  • আদালতে মামলা: এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন দায়ের করা হয়, যেখানে ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণ

শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট আধার কার্ড এবং ভারতীয় নাগরিকত্বের সম্পর্কের বিষয়ে অত্যন্ত কড়া এবং স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণগুলি নিম্নরূপ:

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন
  1. আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়: সুপ্রিম কোর্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছে, আধার কার্ড (Aadhaar) থাকা মানেই এটি ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। আধার মূলত একজন ব্যক্তির পরিচয় (Identity) এবং বসবাসের (Residence) প্রমাণ হিসেবে কাজ করে, যা প্রধানত সরকারি জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের (Welfare Schemes) সুবিধা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  2. বিদেশি নাগরিকদের ভোটাধিকার: আদালত প্রশ্ন তোলে, যদি কোনো বিদেশি নাগরিক রেশন বা অন্য কোনো সরকারি সুবিধার জন্য আধার কার্ড তৈরি করে ফেলেন, তবে কি তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারতের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার পাবেন? আদালতের উত্তর – একেবারেই না।
  3. ভোটের ভিত্তি: শুধুমাত্র পকেটে আধার কার্ড থাকলেই কেউ ভোটার তালিকায় নাম তোলার দাবিদার হতে পারেন না।

নির্বাচন কমিশনের যুক্তি

আদালতে ইলেকশন কমিশন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা নিছক কোনো ‘পোস্ট অফিস’ নয়। অর্থাৎ, কেউ ফর্ম-৬ (ভোটার হওয়ার আবেদনপত্র) এবং আধার কার্ড জমা দিলেই কমিশন চোখ বন্ধ করে তাকে ভোটার হিসেবে মেনে নেবে না।

কমিশনের যুক্তি অনুযায়ী:

  • আধার কার্ড কেবল আবেদনকারীর পরিচয় এবং ঠিকানা যাচাইয়ের কাজে লাগতে পারে।
  • ভোটার তালিকায় নাম তোলার আগে কমিশনকে নিশ্চিত হতে হয় যে, ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ভারতের নাগরিক কি না। এর জন্য অন্যান্য নথিপত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই বা ভেরিফিকেশন অত্যন্ত জরুরি।

আইনি অবস্থান ও সংবিধান

ভারতে ভোটাধিকার পাওয়ার জন্য আইনি কাঠামো অত্যন্ত স্বচ্ছ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২৬ (Article 326) এবং ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (Representation of People Act 1950) অনুযায়ী ভোটার হওয়ার জন্য দুটি প্রধান শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে বিষয়টি সহজ করে বোঝানো হলো:

বিবরণশর্তাবলী
নাগরিকত্বব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক (Citizen of India) হতে হবে।
বসবাসব্যক্তিকে ওই নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সাধারণ বাসিন্দা (Ordinary Resident) হতে হবে।
আধার কার্ডের ভূমিকাএটি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, তাই এটি এককভাবে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ থেকে এটি স্পষ্ট যে, ভোটার তালিকা যাচাই বা ভেরিফিকেশনের জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে পূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র আধার কার্ড দেখিয়েই কেউ ভোটার হতে পারবেন না, তার নাগরিকত্ব প্রমাণ করা বাধ্যতামূলক। তামিলনাড়ু, কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি থেকে আসা পৃথক পিটিশনগুলির ওপর আগামী ১, ২ এবং ৯ ডিসেম্বর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আদালতের বর্তমান মনোভাব ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, শুধুমাত্র সন্দেহের বশে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বাধা দেওয়া কঠিন হবে।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button