AI in Governance: সরকারি কাজে এবার AI এর ব্যবহার! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

AI in Governance: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দপ্তর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে রাজ্যের সাধারণ মানুষের জীবন আরও সহজ হতে চলেছে । সরকার শাসনের মান বাড়াতে, পরিষেবা প্রদানের গতি বৃদ্ধি করতে এবং স্বচ্ছতা আনতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence (AI) ব্যবহারের জন্য একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য অভিজ্ঞ সংস্থাগুলির কাছ থেকে আগ্রহপত্র (EOI) আহ্বান করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল প্রযুক্তি ব্যবহার করে চারটি প্রধান প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ আনা।
সাধারণ মানুষের জন্য কী কী সুবিধা আসছে?
এই বিশাল উদ্যোগের ফলে সাধারণ নাগরিকরা সরাসরি একাধিক ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন। হয়রানি কমবে এবং সরকারি পরিষেবা পাওয়া আরও সহজ হবে। প্রধান চারটি ক্ষেত্র হলো:
- জমির সঠিক দাম ও স্বচ্ছ কেনাবেচা: জমির কেনাবেচার সময় তার সঠিক দাম নির্ধারণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এবার AI ব্যবহার করে একটি বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামো তৈরি করা হবে, যা বিভিন্ন তথ্য যেমন এলাকার পরিকাঠামো, বাজারদর, এবং অন্যান্য বিষয় বিশ্লেষণ করে জমির সঠিক ও স্বচ্ছ মূল্যায়ন করবে । এর ফলে সাধারণ মানুষ জমির ন্যায্য দাম পাবেন এবং দুর্নীতি কমবে।
- পুরনো দলিলের জটমুক্তি ও জালিয়াতি রোধ: বহু পুরনো, হাতে লেখা বাংলা দলিল পুনরুদ্ধার করা এবং তার থেকে তথ্য বের করা অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ । AI-চালিত বিশেষ বাংলা OCR (Optical Character Recognition) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সব পুরনো দলিল ডিজিটাইজ করা হবে । এর মাধ্যমে একটি সম্পত্তির মালিকানার সম্পূর্ণ ইতিহাস বা ‘চেইন ডিড’ সহজেই তৈরি করা যাবে, যা জমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা কমাতে সাহায্য করবে । এমনকি, AI-এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সামান্য তথ্য দিয়ে দলিলের খসড়া তৈরি করতে পারবেন, যার ফলে দলিল লেখকদের উপর নির্ভরতা এবং অতিরিক্ত খরচ কমবে ।
- সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে আর হয়রানি নয়: রাজ্য সরকার ১০০টিরও বেশি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালায়। অনেক সময় সঠিক তথ্য বা পদ্ধতির অভাবে যোগ্য ব্যক্তিরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এই সমস্যার সমাধানে একটি ‘ইউনিফাইড সোশ্যাল রেজিস্ট্রি’ তৈরি করা হবে। AI-এর মাধ্যমে যোগ্য সুবিধাভোগীদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে, সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো (DBT) হবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকর ও ত্রুটিমুক্ত হবে। এর ফলে অযোগ্যদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া এবং দুর্নীতি রোধ করাও সম্ভব হবে।
- দ্রুতগতির সরকারি সিদ্ধান্ত ও পরিষেবা: অর্থ দপ্তরের অভ্যন্তরীণ ফাইল পরীক্ষা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকেও গতিশীল করতে AI ব্যবহার করা হবে। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান সংরক্ষণ করা হবে এবং বিভিন্ন প্রস্তাব দ্রুত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। সরকারি দপ্তরের কাজ দ্রুত হলে তার সুফল পরোক্ষভাবে সাধারণ নাগরিকরাও পাবেন।
এই উদ্যোগ কীভাবে কাজ করবে?
সরকার এই বিশাল কাজটি সম্পন্ন করার জন্য দেশের সেরা AI সংস্থাগুলিকে আহ্বান করেছে। সংস্থাগুলি তাদের প্রস্তাব জমা দেবে এবং যোগ্য সংস্থাগুলিকে প্রথমে প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য একটি ছোট ‘প্রুফ অফ কনসেপ্ট’ (PoC) বা পরীক্ষামূলক মডেল তৈরি করতে হবে। যাদের মডেল সবচেয়ে সফল হবে, তাদেরকেই সম্পূর্ণ সমাধানটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গকে এক নতুন প্রযুক্তি-চালিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যেখানে সরকারি পরিষেবা হবে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং জনদরদী।