Arattai Vs WhatsApp: হোয়াটসঅ্যাপকে বড় ঝটকা! স্বদেশী Arattai-এর ৩ দিনে ১০০ গুণ বৃদ্ধি! আপনি ব্যবহার করছেন তো?

Arattai Vs WhatsApp: ভারতে তৈরি মেসেজিং অ্যাপ ‘ (Arattai) সম্প্রতি অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাত্র তিন দিনে এর ডাউনলোড ১০০ গুণ বেড়েছে, যা হোয়াটসঅ্যাপের মতো বড় কোম্পানিকেও অবাক করে দিয়েছে। এটি শুধু একটি অ্যাপের সাফল্য নয়, এটি ভারতের ডিজিটাল স্বাধীনতার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। Zoho Corporation-এর তৈরি এই অ্যাপটি ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য ডেটা সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। যেখানে আমাদের সমস্ত ব্যক্তিগত চ্যাট, কল এবং তথ্য ভারতের মাটিতেই সুরক্ষিত থাকবে, সেখানে বিদেশি অ্যাপের উপর নির্ভরতা কমানো এখন সময়ের দাবি।
‘আরাট্টাই’ (Arattai) কী এবং কেন এটি এত জনপ্রিয়?
‘আরাট্টাই’ একটি তামিল শব্দ, যার অর্থ ‘কথোপকথন’ বা ‘আড্ডা’। এটি ভারতীয় বহুজাতিক সফটওয়্যার কোম্পানি ‘জোহো’ (Zoho) দ্বারা তৈরি, যার সদর দপ্তর চেন্নাইতে। ২০২১ সালে এটি লঞ্চ হলেও, সম্প্রতি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ এবং ডেটা প্রাইভেসি নিয়ে সচেতনতা বাড়ার ফলে এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। অ্যাপল অ্যাপ স্টোর এবং গুগল প্লে স্টোর, দুই জায়গাতেই এটি টপ চার্টে উঠে এসেছে। এর ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস এবং দেশীয় অ্যাপ হওয়ার অনুভূতি একে সাধারণ মানুষের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
হোয়াটসঅ্যাপ বনাম আরাট্টাই: মূল পার্থক্য কোথায়?
আরাট্টাই এবং হোয়াটসঅ্যাপের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি হল মালিকানা, ডেটা সুরক্ষা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা। এই বিষয়গুলিই আরট্টাইকে এক বিশেষ পরিচিতি দিচ্ছে।
- মালিকানা: হোয়াটসঅ্যাপ একটি আমেরিকান কোম্পানি মেটা (পূর্বে ফেসবুক) দ্বারা পরিচালিত, তাই এর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ বিদেশি। অন্যদিকে, আরাট্টাই সম্পূর্ণ ভারতীয় মালিকানাধীন, যা ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর এক চমৎকার উদাহরণ।
- ডেটা সুরক্ষা: হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ডেটা বিদেশের সার্ভারে স্টোর করে, যেখানে বিদেশি আইন প্রযোজ্য। কিন্তু আরাট্টাই-এর সার্ভার ভারতেই অবস্থিত, যার ফলে ভারতীয় আইন অনুযায়ী ব্যবহারকারীর সমস্ত তথ্য সুরক্ষিত থাকে। এটি ডেটা চুরির ঝুঁকি কমায় এবং জাতীয় সুরক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
- বিজ্ঞাপন-মুক্ত অভিজ্ঞতা: আরাট্টাই একটি ‘নো-অ্যাডস’ পলিসি অনুসরণ করে, অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা কোনওরকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে।
- ফিচার: ওয়ান-টু-ওয়ান ও গ্রুপ চ্যাটিং, অডিও-ভিডিও কল, মিডিয়া শেয়ারিং, এবং স্ট্যাটাস আপডেটের মতো হোয়াটসঅ্যাপের প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় ফিচারই আরাট্টাই-তে উপলব্ধ।
চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
আরাট্টাই-এর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো হোয়াটসঅ্যাপের বিশাল ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং নেটওয়ার্ক প্রভাব। মানুষ সেই অ্যাপই ব্যবহার করতে চায় যেখানে তাদের বন্ধু এবং পরিবার রয়েছে। এই অভ্যাস পরিবর্তন করা বেশ কঠিন। তাছাড়া, হোয়াটসঅ্যাপের মতো টেক জায়ান্টের সঙ্গে পাল্লা দিতে ক্রমাগত উদ্ভাবন এবং পরিকাঠামোর জন্য বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন।
তবে, ‘ভোকাল ফর লোকাল’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মতো উদ্যোগগুলো আরাট্টাই-এর জন্য এক বিশাল সুযোগ তৈরি করেছে। ডেটা সুরক্ষা নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ায় অনেকেই একটি দেশীয় এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প খুঁজছেন। যদি ভারত সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অধীনে এটিকে সমর্থন করে, তবে এটি দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।
ডিজিটাল আত্মনির্ভরতার পথে ভারত
চীন (WeChat), রাশিয়া (Telegram) এবং আমেরিকার মতো দেশগুলোর নিজস্ব জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ রয়েছে, যা তাদের ডিজিটাল সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করে। ভারতের ডিজিটাল ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য আরাট্টাই-এর মতো অ্যাপের সাফল্য অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের অর্থনীতি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও একটি নতুন দিশা দেখাবে। আরাট্টাই-এর এই উত্থান প্রমাণ করে যে ভারতীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করতে সক্ষম এবং এখন সময় এসেছে আমাদের দেশীয় উদ্ভাবনকে সমর্থন করার।