Black Box: মিলল বিমানের ব্ল্যাক বক্স! কিন্তু কী এই ব্ল্যাক বক্স? বিমান ধ্বংস হলেও কীভাবে রক্ষা পায় এটি? কী কী রেকর্ড হয়?

Black Box: শনিবার, ১৪ই জুন, ২০২৫, আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই একটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা দেশে। তবে এরই মধ্যে তদন্তকারীদের হাতে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র – বিমানটির ব্ল্যাক বক্স, যা প্রায় অক্ষত অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়েছে। এই ব্ল্যাক বক্সই এখন বিমান দুর্ঘটনার আসল কারণ উদঘাটন করতে পারে। কিন্তু কী এই ব্ল্যাক বক্স? কেনই বা এর নাম ব্ল্যাক বক্স, আর কীভাবে এটি বিমান ধ্বংস হয়ে গেলেও রক্ষা পায়? চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
বিমানের ব্ল্যাক বাক্স কী?
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ‘ব্ল্যাক বক্স’ (Black Box) নামটা শুনলে কালো রঙের কোনো বাক্সের কথা মনে হলেও, আদতে এটি উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়। এর কারণ হলো, যাতে বিমান দুর্ঘটনার পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেও এটিকে সহজে খুঁজে বের করা যায়। এর আসল নাম হলো ফ্লাইট রেকর্ডার (Flight Recorder)। প্রতিটি বাণিজ্যিক বিমানে দুটি প্রধান ব্ল্যাক বক্স থাকে:
১. ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (Flight Data Recorder – FDR): এটি বিমানের ফ্লাইট সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করে। ২. ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (Cockpit Voice Recorder – CVR): এটি ককপিটের ভিতরের সমস্ত কথাবার্তা এবং শব্দ রেকর্ড করে।
কীভাবে কাজ করে এটি?
এই দুটি রেকর্ডার বিমানের একেবারে পিছনের দিকে বা লেজের অংশে রাখা হয়, কারণ বিমান দুর্ঘটনার সময় সাধারণত লেজের অংশটিই সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (FDR): এই যন্ত্রটি বিমানের প্রায় ৮৮টিরও বেশি প্যারামিটার বা তথ্য রেকর্ড করতে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – বিমানের গতি (airspeed), উচ্চতা (altitude), অভিমুখ (heading), ইঞ্জিনের অবস্থা, জ্বালানির পরিমাণ, এবং পাইলটদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন লিভারের অবস্থান ইত্যাদি। আধুনিক বিমানগুলিতে FDR প্রায় ২৫ ঘন্টা পর্যন্ত তথ্য ধারণ করে রাখতে পারে।
- ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR): এই যন্ত্রটি ককপিটের ভিতরের সমস্ত শব্দ রেকর্ড করে। এর মধ্যে থাকে পাইলটদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (ATC) সাথে যোগাযোগ, বিভিন্ন সতর্কতামূলক অ্যালার্মের শব্দ এবং ককপিটের অন্যান্য যান্ত্রিক শব্দ। CVR শেষ ২ ঘন্টার অডিও রেকর্ড ধরে রাখে।
বিমান ধ্বংস হলেও কীভাবে রক্ষা পায় এটি?
ব্ল্যাক বক্সকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে এটি ভয়াবহতম বিমান দুর্ঘটনাতেও অটুট থাকতে পারে। এর বাইরের আবরণটি টাইটানিয়াম বা স্টেইনলেস স্টিলের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। এর ভিতরে থাকা মেমোরি চিপগুলিকে রক্ষা করার জন্য বেশ কয়েকটি স্তরের সুরক্ষা কবচ থাকে।
- প্রচণ্ড চাপ সহ্য করার ক্ষমতা: এটি ৩৪০০-জি (3400 G-force) অর্থাৎ অভিকর্ষজ বলের থেকে ৩৪০০ গুণ বেশি চাপ সহ্য করতে পারে।
- অগ্নি নিরোধক: এটি প্রায় ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ ঘন্টা পর্যন্ত অক্ষত থাকতে পারে।
- জলের নিচেও সুরক্ষিত: ব্ল্যাক বক্সটি সমুদ্রের প্রায় ২০,০০০ ফুট গভীরেও জলের চাপ সহ্য করতে পারে। এর সাথে একটি আন্ডারওয়াটার লোকেটর বিকন (Underwater Locator Beacon – ULB) লাগানো থাকে। জলে নিমজ্জিত হওয়ার সাথে সাথেই এটি সক্রিয় হয়ে যায় এবং প্রতি সেকেন্ডে একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ পাঠাতে থাকে, যা প্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত চলে। এই সংকেতের সাহায্যেই জলের গভীর থেকেও এটিকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়।
কি ধরণের রেকর্ড থাকে?
যেমনটি আগেই বলা হয়েছে, ব্ল্যাক বক্সে দুই ধরনের রেকর্ড থাকে:
- তথ্যগত রেকর্ড (Data Record): বিমানের প্রযুক্তিগত এবং ফ্লাইট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, যা FDR-এ রেকর্ড হয়।
- শব্দগত রেকর্ড (Audio Record): ককপিটের ভিতরের পাইলটদের কথাবার্তা এবং অন্যান্য শব্দ, যা CVR-এ রেকর্ড হয়।
ভিডিও রেকর্ড হয়? (Is video recorded?)
না, বর্তমানের ব্ল্যাক বক্সগুলিতে ভিডিও রেকর্ড করার কোনো ব্যবস্থা নেই। যদিও এই বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে পাইলটদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখে এবং প্রযুক্তিগত কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে এখনও পর্যন্ত ককপিটে ভিডিও রেকর্ডার লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
অডিও রেকর্ড হয়? (Is audio recorded?)
হ্যাঁ, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR) ককপিটের ভেতরের সমস্ত অডিও বা শব্দ রেকর্ড করে। পাইলটদের শেষ মুহূর্তের কথাবার্তা এবং ককপিটের পরিবেশের শব্দ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আহমেদাবাদে উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাক বক্সটি এখন ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীরা আশা করছেন যে, এর মধ্যে থাকা তথ্য এবং অডিও বিশ্লেষণ করে খুব শীঘ্রই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আসল কারণ জানা সম্ভব হবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপর্যয় এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।