BLO App Glitch: ভোটার তালিকায় নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা! অ্যাপ বিভ্রাটে সমস্যায় পড়তে পারেন বহু মানুষ
BLO App Glitch: পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ বা এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া চলাকালীন ফের বড়সড় প্রযুক্তিগত বাধার মুখে পড়লেন বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO)। নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট বিএলও অ্যাপে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে প্রকৃত ভোটারদের তথ্যের সঙ্গে পুরনো তালিকার সংযোগ বা লিঙ্ক স্থাপন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে আধিকারিকদের। এই বিভ্রাটের ফলে রাজ্যের বহু বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়া এবং অকারণে নোটিশ পাওয়ার এক প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে।
অ্যাপে মিলছে না ২০০২ সালের ভোটার তালিকা
সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিএলও অ্যাপের একটি টেকনিক্যাল ত্রুটি। বুথ লেভেল অফিসাররা যখন ভোটারদের তথ্য যাচাই বা এসআইআর ফর্ম আপলোড করতে যাচ্ছেন, তখন অ্যাপের সিস্টেমে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার কোনো হদিস মিলছে না।
- ‘নট ফাউন্ড’ সমস্যা: আধিকারিকদের হাতে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার হার্ডকপি বা কাগজে ছাপানো তালিকা মজুত রয়েছে। কিন্তু অ্যাপে যখন সেই তথ্য খোঁজা হচ্ছে, তখন স্ক্রিনে “Not Found” বার্তা দেখাচ্ছে।
- লিঙ্ক স্থাপনে ব্যর্থতা: যেহেতু অ্যাপের ডেটাবেসে ২০০২ সালের তালিকাটি দৃশ্যমান হচ্ছে না, তাই বর্তমান ভোটারদের তথ্যের সঙ্গে পুরনো তথ্যের ডিজিটাল লিঙ্ক করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ, এই লিঙ্কিং প্রক্রিয়াটি নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
রাজ্যজুড়ে এই সমস্যা দেখা দিলেও কয়েকটি নির্দিষ্ট জেলায় এর প্রকোপ সবথেকে বেশি। বিশেষ করে নদিয়া জেলা থেকে এই অ্যাপ বিভ্রাটের অভিযোগ ভুরি ভুরি জমা পড়েছে। এছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু এলাকা যেমন আমডাঙ্গা ও শাসন এবং খোদ কলকাতার কিছু অংশেও বিএলও-রা একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
সাধারণ ভোটারদের জন্য আশঙ্কার কারণ
এই প্রযুক্তিগত ত্রুটি শুধুমাত্র আধিকারিকদের কাজের চাপ বাড়াচ্ছে না, বরং সাধারণ ভোটারদের জন্যও এটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- নাম বাদ পড়ার ঝুঁকি: আগামী ৯ই ডিসেম্বর ভোটার তালিকার খসড়া বা ড্রাফট রোল প্রকাশ করা হবে। তার আগে যদি অ্যাপের মাধ্যমে সঠিক তথ্য লিঙ্ক না করা যায়, তবে অনেক প্রকৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারে।
- অযথা হয়রানি ও নোটিশ: আধিকারিকদের কাছে হার্ডকপি থাকা সত্ত্বেও অ্যাপে তথ্য না মেলায়, নির্বাচন কমিশন যান্ত্রিকভাবে ধরে নিতে পারে যে ওই ব্যক্তির তথ্যে গরমিল রয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে নোটিশ পাঠানো হতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য হয়রানির কারণ হবে।
নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ ও বর্তমান স্থিতি
ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে এসে এই বিপত্তিতে পড়েছে।
- কাজের অগ্রগতি: রাজ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৮৫ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজেশন বা আপলোডিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১৫ শতাংশ কাজ শেষ মুহূর্তে এসে থমকে গেছে।
- সময়ের সঙ্গে লড়াই: এনুমারেশন ফর্ম আপলোড এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি শেষ করার জন্য হাতে আর মাত্র কয়েক দিন (প্রায় ৭ দিন) সময় রয়েছে।
- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ: পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে নদিয়া জেলার জেলাশাসক সহ একাধিক ইআরও (ERO) বিষয়টি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দপ্তরে জানিয়েছেন। রাজ্যের সিইও দপ্তর তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের টেকনিক্যাল এবং আইটি এক্সপার্টদের নজরে এনেছেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এই মুহূর্তে বিএলও-রা যেমন ডেডলাইনের চাপে রয়েছেন, তেমনই সাধারণ ভোটাররা তাদের নাম তালিকায় থাকা নিয়ে সংশয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কমিশন কত দ্রুত এই যান্ত্রিক গোলযোগ মেটাতে পারে, এখন সেটাই দেখার।