BLO Teacher: BLO দায়িত্ব না নেওয়ায় প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক শাস্তির মুখে! শো-কজ নোটিস ধরানো হল শিক্ষকদের

BLO Teacher : রাজ্যে এক নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও (BLO) হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের স্কুল শিক্ষকদের। কিন্তু প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক সেই নির্দেশ অমান্য করায় এবার তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিস (Show Cause Notice) ধরানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এই কড়া পদক্ষেপে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়েছে।
কেন এই শাস্তির খাঁড়া?
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, নিয়োগপত্র পাওয়া সত্ত্বেও বহু শিক্ষক বিএলও হিসেবে কাজে যোগ দেননি। তাই এবার তাঁদের বিরুদ্ধে সরাসরি বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিবকে চিঠি দিয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। কমিশনের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কাজ এবং এতে কোনো প্রকার অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না। এই প্রথমবার কাজে যোগ না দেওয়ার কারণে শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হলো।
বিএলও-র কাজ এবং আসন্ন ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR 2025)
নির্বাচন কমিশনের এই তৎপরতার কারণ হলো স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) 2025। সম্প্রতি বিহারে এই SIR প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৩ বছর পর ভোটার তালিকার এমন বিস্তারিত সংশোধন হতে চলেছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো একটি স্বচ্ছ এবং ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মূল কাণ্ডারী হলেন বিএলও-রা। তাঁদের প্রধান কাজগুলি হলো:
- বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করা।
- নতুন এবং যোগ্য ভোটারদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।
- মৃত বা স্থানান্তরিত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।
- ভোটারদের তথ্যের ভুল সংশোধন করা।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার জন্য বিএলও-দের ভূমিকা অপরিসীম।
শিক্ষকদের আশঙ্কা ও বিতর্ক
নির্দেশ অমান্য করার পিছনে শিক্ষকদের একাধিক আশঙ্কা কাজ করছে। প্রথমত, রাজ্যের শাসকদল এই SIR প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে বিএলও হিসেবে কর্মরত শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে, ভুয়ো বা অস্তিত্বহীন ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সময় তাঁদের উপর রাজনৈতিক চাপ আসতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বিহারের উদাহরণ শিক্ষকদের ভয় আরও বাড়িয়েছে। সেখানে SIR প্রক্রিয়ায় কাজ করতে গিয়ে সামান্য ভুলে কয়েকজন শিক্ষককে গুরুতর শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকরাও আশঙ্কা করছেন যে, নাম নথিভুক্ত বা বাতিল করতে গিয়ে কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে।
এর বিপরীতে শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে, বিএলও-র দায়িত্ব গ্রহণ না করলে শাস্তির কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন এই পরিস্থিতিতে ঠিক কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক চাপ, শাস্তির ভয় এবং আইনি জটিলতার আশঙ্কায় রাজ্যের শিক্ষক সমাজ এক নজিরবিহীন টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে।