Career Options After HS: উচ্চ মাধ্যমিকের পর কোন পথে কেরিয়ার? জানুন বিস্তারিত সুযোগ

Career Options After HS: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই বহু ছাত্রছাত্রী তাদের ভবিষ্যতের কেরিয়ারের পথ বেছে নেয়। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) পরিচালিত এই পরীক্ষার পর ছাত্রছাত্রীদের সামনে খুলে যায় অসংখ্য সুযোগের দরজা। বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা – প্রতিটি শাখার পড়ুয়াদের জন্যই রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। কিন্তু কোন পথে গেলে স্বপ্ন সফল হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কঠিন। এই প্রতিবেদনে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিভিন্ন শাখার ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপলব্ধ প্রধান কেরিয়ার বিকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করব।
বিজ্ঞান শাখা (Science Stream)
বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রথাগতভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারি পড়ার সুযোগ তো রয়েছেই, এছাড়াও আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও অনেক নতুন ও আকর্ষণীয় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
- ইঞ্জিনিয়ারিং (B.Tech/BE): সবচেয়ে জনপ্রিয় বিকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম। কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্যাল, সিভিল, কেমিক্যাল, বায়োটেকনোলজি, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি নানা শাখায় পড়ার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য JEE Main, JEE Advanced বা WBJEE-এর মতো প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সরকারি চাকরির সুযোগ যেমন ISRO, DRDO-তে রয়েছে, তেমনই বেসরকারি ক্ষেত্রেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
- চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical): MBBS (ডাক্তারি) ছাড়াও BDS (ডেন্টাল), BAMS (আয়ুর্বেদিক), BHMS (হোমিওপ্যাথি) ইত্যাদি কোর্স করা যেতে পারে। NEET পরীক্ষায় ভালো ফল করা এক্ষেত্রে আবশ্যক। এছাড়াও নার্সিং (B.Sc Nursing), ফার্মাসি (B.Pharm), ফিজিওথেরাপি (BPT), মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি (BMLT) ইত্যাদি প্যারামেডিক্যাল কোর্সগুলিরও চাহিদা ব্যাপক।
- সাধারণ বিজ্ঞান (General B.Sc): ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স, স্ট্যাটিস্টিক্স, বায়োলজি, জুলজি, বোটানি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োটেকনোলজি, কম্পিউটার সায়েন্স (B.Sc), ডেটা সায়েন্স, অ্যানথ্রোপলজি, ফরেনসিক সায়েন্স, এগ্রিকালচার, জেনেটিক্স, জিওলজি, নিউরোসায়েন্স, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে গবেষণা, শিক্ষকতা বা সংশ্লিষ্ট শিল্পে কেরিয়ার গড়া যায়। CUET-এর মতো পরীক্ষা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
- অন্যান্য কোর্স: আর্কিটেকচার (B.Arch), বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এভিয়েশন (B.Sc Aviation), মেরিন বায়োলজি, পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Science) ইত্যাদিও ভালো বিকল্প হতে পারে।
বাণিজ্য শাখা (Commerce Stream)
বাণিজ্য শাখার পড়ুয়াদের জন্য ফিনান্স, অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট এবং আইন ক্ষেত্রে বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে।
- চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (CA): অন্যতম প্রতিষ্ঠিত পেশা। অ্যাকাউন্টিং, অডিটিং, ট্যাক্সেশন এবং ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হয়।
- কোম্পানি সেক্রেটারি (CS): কোম্পানির আইনি ও প্রশাসনিক দিকগুলি দেখাশোনা করার দায়িত্ব থাকে।
- কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্সি (CMA): উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রের খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- স্নাতক ডিগ্রি (Graduation):
- B.Com (Bachelor of Commerce): অ্যাকাউন্টিং, ফিনান্স, ইকোনমিক্স, ট্যাক্সেশন, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে ভিত্তি তৈরি করে। অনার্স বা জেনারেল কোর্স করা যায়।
- BBA (Bachelor of Business Administration): ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন দিক যেমন মার্কেটিং, ফিনান্স, হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে পড়ানো হয়।
- BMS (Bachelor of Management Studies): BBA-এর অনুরূপ একটি কোর্স।
- B.Sc./BA in Economics: অর্থনীতির তত্ত্ব, নীতি এবং প্রয়োগ নিয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করা যায়। ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট, ডেটা অ্যানালিস্ট হওয়ার সুযোগ থাকে।
- BCA (Bachelor of Computer Applications): বাণিজ্য শাখার পড়ুয়ারাও এই কোর্স করে IT সেক্টরে প্রবেশ করতে পারে।
- অন্যান্য কোর্স: ইন্টিগ্রেটেড ল (BBA LLB/B.Com LLB), অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স, ব্যাঙ্কিং ও ইনস্যুরেন্স (BBI), ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কোর্সগুলিও যথেষ্ট জনপ্রিয়।
কলা শাখা (Arts/Humanities Stream)
কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সৃজনশীল এবং সামাজিক ক্ষেত্রে কেরিয়ারের প্রচুর বিকল্প রয়েছে।
- স্নাতক ডিগ্রি (Graduation – BA): বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা, দর্শন, এডুকেশন, সাইকোলজি, অর্থনীতি, সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন (Journalism & Mass Communication), ফাইন আর্টস (Fine Arts), অ্যানিমেশন, হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স বা জেনারেল কোর্স করা যায়।
- পেশাদারী কোর্স (Professional Courses):
- আইন (Law – BA LLB): পাঁচ বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্স। আইনজীবী, আইনি পরামর্শদাতা বা কর্পোরেট ল’ইয়ার হওয়া যায়।
- ফ্যাশন ডিজাইনিং: পোশাক ও অ্যাক্সেসরিজ ডিজাইন নিয়ে আগ্রহ থাকলে এটি একটি ভালো বিকল্প।
- হোটেল ম্যানেজমেন্ট (BHM): হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার গড়ার সুযোগ।
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট: বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও আয়োজন করার কোর্স।
- জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশন (BJMC/BMC): প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মিডিয়ায় সাংবাদিকতা বা অন্যান্য সম্পর্কিত পেশা।
- ফাইন আর্টস (BFA): পেন্টিং, স্কাল্পচার, ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক ডিজাইন, অ্যানিমেশন ইত্যাদি সৃজনশীল ক্ষেত্রে কেরিয়ার।
- এডুকেশন (B.Ed/D.El.Ed): শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য এই কোর্সগুলি জরুরি।
- সোশ্যাল ওয়ার্ক (BSW): সমাজসেবামূলক কাজে আগ্রহ থাকলে এই কোর্সটি করা যেতে পারে।
- বিপণন (Digital Marketing): বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর চাহিদা তুঙ্গে।
- ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং: ঘর সাজানো ও অন্দরসজ্জার ডিজাইন।
অন্যান্য বিকল্প (Other Options)
- পলিটেকনিক (Polytechnic): মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের পর কারিগরি শিক্ষা নিয়ে দ্রুত চাকরি পেতে চাইলে ৩ বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স (পলিটেকনিক) একটি ভালো বিকল্প। বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীরা VOCLET পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারে।
- সরকারি চাকরি (Government Jobs): উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে, রেল, ব্যাঙ্ক, পুলিশ, ডিফেন্স (NDA) ইত্যাদিতে চাকরির জন্য আবেদন করা যায়। এর জন্য নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়।
কেরিয়ার নির্বাচন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য বিচার করে সঠিক পথ বেছে নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কেরিয়ার কাউন্সেলরের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন কলেজের ওয়েবসাইট, সরকারি পোর্টাল এবং শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটে চোখ রাখলে নতুন কোর্স এবং সুযোগ সম্পর্কে আপডেটেড থাকা যায়।