দেশ

Cloud Seeding Delhi: দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টি! দূষণ কমাতে মেঘে রাসায়নিক প্রয়োগ, বৃষ্টি হতে কেন লাগে ১৫ মিনিট থেকে ৪ ঘন্টা?

Cloud Seeding Delhi: দিল্লির বাতাস আবারও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৩০০ ছাড়িয়ে ‘খুব খারাপ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই ভয়াবহ দূষণ মোকাবেলায়, দিল্লি সরকার ২৮ অক্টোবর, ২০২৫-এ ক্লাউড সিডিং-এর একটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মেঘের মধ্যে রাসায়নিক প্রয়োগ করে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়, যা বাতাসের ভাসমান দূষণ কণাগুলোকে ধুয়ে ফেলতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, এই প্রক্রিয়া শুরু করার পরেও বৃষ্টি হতে ১৫ মিনিট থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে কেন?

ক্লাউড সিডিং কী?

ক্লাউড সিডিং বা মেঘবীজ বপন হলো আবহাওয়া পরিবর্তনের একটি ৮০ বছরের পুরনো কৌশল। এর মাধ্যমে মেঘের মধ্যে কিছু রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করিয়ে বৃষ্টি বা তুষারপাত ঘটানো হয়। স্বাভাবিকভাবে মেঘে জলকণা বা বরফকণা তৈরির জন্য ধূলিকণা বা লবণের মতো নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক সময় এই নিউক্লিয়াসের অভাবে মেঘ থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি হয় না। ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিতে কৃত্রিম নিউক্লিয়াস ব্যবহার করে বৃষ্টিপাতকে ত্বরান্বিত করা হয়।

  • বৈজ্ঞানিক তথ্য: দিল্লির ক্ষেত্রে মূলত সিলভার আয়োডাইড (AgI) ব্যবহার করা হয়, যা শীতল মেঘে বরফকণা তৈরিতে সাহায্য করে।
  • পরিসংখ্যান: এই প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে ৫-১৫% বেশি বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম।

দিল্লিতে কেন ক্লাউড সিডিং?

দিল্লি বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর। বিশেষ করে শীতকালে খড় পোড়ানো এবং যানবাহন থেকে নির্গত PM2.5 কণা বাতাসকে বিষাক্ত করে তোলে। কৃত্রিম বৃষ্টি এই কণাগুলোকে ধুয়ে ফেলে বাতাসের মান উন্নত করতে পারে। এই কারণেই, মে ২০২৫-এ দিল্লি মন্ত্রিসভা পাঁচটি ট্রায়ালের জন্য ₹৩.২১ কোটি অনুমোদন করে এবং সেপ্টেম্বরে আইআইটি কানপুরের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

২৮ অক্টোবর দুপুর ১২:৩০ থেকে ১টার মধ্যে একটি বিমানের মাধ্যমে এই পরীক্ষামূলক সিডিং করা হয়। পরিবেশ মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা জানিয়েছেন যে শীঘ্রই বৃষ্টি হতে পারে। মোট পাঁচটি ট্রায়াল চালানো হবে, যার প্রতিটির জন্য প্রায় ₹৬.৪ মিলিয়ন খরচ হবে।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

ক্লাউড সিডিং-এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া

দিল্লিতে বিমানের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছে। আসুন ৬টি ধাপে এটি বোঝা যাক:

  1. মেঘ নির্বাচন: রাডার ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ২-৫ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকা উপযুক্ত মেঘ চিহ্নিত করা হয়, যেখানে ০°C-এর নিচে জলকণা (supercooled water) মজুত থাকে। AgI কার্যকর হওয়ার জন্য মেঘের তাপমাত্রা -৫°C থেকে -২০°C-এর মধ্যে থাকা প্রয়োজন।
  2. বীজ বপন (Seeding): বিমানটি মেঘের মধ্যে প্রবেশ করে সিলভার আয়োডাইডের (AgI) ক্ষুদ্র কণা ছড়িয়ে দেয়। দিল্লির ট্রায়ালে একটি বিমানে ১০-১৫ কেজি AgI ব্যবহার করা হয়েছে।
  3. নিউক্লিয়েশন (Nucleation): AgI কণাগুলি জলকণার সাথে মিশে বরফের ভ্রূণ তৈরি করে। একটি AgI কণা থেকে ১০০-১০০০টি বরফকণা তৈরি হতে পারে।
  4. বৃদ্ধি ও সংযোজন: বরফকণাগুলো বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে বড় হতে থাকে।
  5. অধঃক্ষেপণ (Precipitation): কণাগুলো যথেষ্ট ভারী হয়ে গেলে বৃষ্টির আকারে মাটির দিকে পড়তে শুরু করে। মেঘের তলদেশ থেকে মাটিতে পৌঁছতে প্রায় ১০-৩০ মিনিট সময় লাগে।
  6. বৃষ্টির বন্টন: বৃষ্টি সাধারণত ১০-৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পড়ে। দিল্লিতে লক্ষ্যমাত্রা ৫-১০ মিমি বৃষ্টিপাত।

বৃষ্টি হতে ১৫ মিনিট থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগে কেন?

ক্লাউড সিডিং কোনো জাদু নয়, এটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে কেবল ত্বরান্বিত করে। তাই সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি হয় না। এর কয়েকটি কারণ হলো:

  • ১৫-৩০ মিনিট (তাৎক্ষণিক প্রভাব): সিডিং-এর ১৫ মিনিটের মধ্যে নিউক্লিয়াস তৈরি হতে শুরু করে। মেঘ প্রস্তুত থাকলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
  • ৩০ মিনিট – ১ ঘন্টা (মূল বৃদ্ধি): বরফকণাগুলো বড় হতে প্রায় ২০-৪০ মিনিট সময় লাগে। এই সময়ে কণাগুলো বাতাসের সাথে পরিবাহিত হয়।
  • ১-৪ ঘন্টা (সম্পূর্ণ বৃষ্টি): বড় কণা তৈরি হতে, গলে যেতে এবং ছড়িয়ে পড়তে ১-২ ঘন্টা সময় লাগে। যদি বাতাস ধীর গতির হয় বা মেঘ অনেক উঁচুতে থাকে, তবে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO)-এর মতে, ৭০% ক্ষেত্রে ২০-৬০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল দেখা যায়, কিন্তু ২০-৩০% ক্ষেত্রে মেঘের ঘনত্ব এবং আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ২-৪ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।

সাফল্য এবং সুবিধা

  • বৃষ্টি বৃদ্ধি: ৫-১৫% বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
  • দূষণ হ্রাস: PM2.5 কণার পরিমাণ ৩০-৫০% পর্যন্ত কমতে পারে, যা AQI-কে ১০০-১৫০-এর মধ্যে নামিয়ে আনতে পারে।
  • অসুবিধা: সিলভার আয়োডাইড সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার মাটিতে জমা হতে পারে। মেঘ না থাকলে এই প্রক্রিয়া ২০-৩০% ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারে।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button