e-passport India: এসে গেল ভারতের নতুন ই-পাসপোর্ট! দেখুন নতুন বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি

e-passport India: ভারত সরকার সম্প্রতি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ই-পাসপোর্ট পরিষেবা চালু করেছে, যা দেশের নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আরও সুরক্ষিত ও মসৃণ করার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাসপোর্ট সেবা প্রোগ্রাম ২.০-এর অধীনে এই নতুন ই-পাসপোর্টে প্রচলিত পাসপোর্টের পরিচিত বৈশিষ্ট্যের সাথে যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রনিক চিপ। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ই-পাসপোর্ট কী এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
ই-পাসপোর্ট হল একটি সম্মিলিত কাগজ ও ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) চিপ: পাসপোর্টের কভারে একটি ছোট ইলেকট্রনিক চিপ এবং অ্যান্টেনা এমবেড করা থাকে। এই চিপে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্য ও বায়োমেট্রিক বিবরণ (যেমন আঙুলের ছাপ ও মুখের ছবি) নিরাপদে সংরক্ষিত থাকে।
- উন্নত নিরাপত্তা: এই চিপে থাকা ডেটা ডিজিটালভাবে স্বাক্ষরিত এবং পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার (PKI) দ্বারা সুরক্ষিত, যা ডেটার সত্যতা নিশ্চিত করে এবং অননুমোদিত অ্যাক্সেস রোধ করে। এর ফলে পাসপোর্ট জালিয়াতি, ডেটা পরিবর্তন এবং পরিচয় চুরির ঝুঁকি বহুলাংশে হ্রাস পায়।
- সহজে শনাক্তকরণ: ই-পাসপোর্টের সামনের কভারের নিচে একটি ছোট সোনালী রঙের প্রতীক থাকে, যা এটিকে সাধারণ পাসপোর্ট থেকে আলাদা করে।
- আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ: এই পাসপোর্টগুলি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (ICAO) দ্বারা নির্ধারিত মান অনুসরণ করে তৈরি, তাই বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা কী কী?
ই-পাসপোর্টের একাধিক সুবিধা রয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করবে:
- বর্ধিত নিরাপত্তা: চিপের মধ্যে থাকা এনক্রিপ্টেড ডেটার কারণে এটি নকল করা বা টেম্পার করা অত্যন্ত কঠিন। এটি পরিচয় যাচাইকরণ প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
- দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া: বিমানবন্দরগুলিতে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে স্বয়ংক্রিয় গেটের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, ফলে অপেক্ষার সময় কমে।
- ডেটা সুরক্ষা: ব্যক্তিগত এবং বায়োমেট্রিক তথ্য চিপের মধ্যে সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত থাকায় তথ্যের গোপনীয়তা বজায় থাকে।
- জালিয়াতি প্রতিরোধ: এটি জাল পাসপোর্ট তৈরি এবং ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
কারা এবং কীভাবে আবেদন করতে পারবেন?
বর্তমানে নির্বাচিত কয়েকটি শহরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (PSK) থেকে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে। সরকার ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সারা দেশে সমস্ত পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে এই পরিষেবা চালু করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। চেন্নাইতে ইতিমধ্যে ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে ই-পাসপোর্ট প্রদান শুরু হয়েছে।
আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণ পাসপোর্টের মতোই:
- অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: পাসপোর্ট সেবার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.passportindia.gov.in/) গিয়ে “Register Now” লিঙ্কে ক্লিক করে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- ফর্ম পূরণ: লগইন করার পর “Apply for Fresh Passport/Re-issue of Passport” লিঙ্কে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় বিবরণসহ আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
- ফি প্রদান ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট: আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর “Pay and Schedule Appointment” লিঙ্কের মাধ্যমে অনলাইনে ফি প্রদান করে পছন্দের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
- নথি যাচাইকরণ: নির্ধারিত দিনে আসল নথি ও আবেদনের রসিদসহ পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ ও ছবি) সংগ্রহ করা হবে এবং নথি যাচাই করা হবে।
- পুলিশ ভেরিফিকেশন: এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
- পাসপোর্ট প্রাপ্তি: সমস্ত প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ই-পাসপোর্ট আবেদনকারীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
যাঁদের পুরনো বা প্রচলিত পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সেটি বৈধ থাকবে। নতুন করে ই-পাসপোর্ট নেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, মেয়াদ শেষে নতুন পাসপোর্ট করার সময় অথবা পাসপোর্ট পুনঃইস্যু করার সময় ই-পাসপোর্ট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের এই ই-পাসপোর্ট উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আরও বেশি সুরক্ষা ও সুবিধা নিয়ে আসবে।