Family Pension: বাবার মৃত্যুর পর বিবাহবিচ্ছেদ হলে মিলবে না ফ্যামিলি পেনশন, বড় রায় শোনালো কলকাতা হাইকোর্ট
Family Pension: পারিবারিক পেনশন বা ফ্যামিলি পেনশন নিয়ে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ডিভোর্সি বা বিবাহবিচ্ছিন্না কন্যাদের পেনশন পাওয়ার অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের ধোঁয়াশা কাটাতে এই নির্দেশিকা এক নতুন নজির সৃষ্টি করল। আদালতের স্পষ্ট বার্তা, বাবার মৃত্যুর পর যদি মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়, তবে তিনি আর ‘বাপের বাড়ির’ পেনশনের দাবিদার হতে পারবেন না। বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থসারথী সেনের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেছেন।
মামলার প্রেক্ষাপট এবং ঘটনাপ্রবাহ
এই মামলাটি মূলত এক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর কন্যার আবেদনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ঘটনার সূত্রপাত বেশ কয়েক বছর আগে।
- ১৯৯৬ সাল: আবেদনকারী মহিলার বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
- ২০০৩ সাল: সংশ্লিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর মৃত্যু হয়। সেই সময় তাঁর মেয়ে বিবাহিত ছিলেন এবং স্বামীর সঙ্গেই সংসার করছিলেন।
- ২০১৬ সাল: বাবার মৃত্যুর প্রায় ১৩ বছর পর ওই মহিলার বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রবল আর্থিক অনটনের সম্মুখীন হয়ে ওই মহিলা বাবার ফ্যামিলি পেনশনের জন্য আবেদন জানান। তাঁর দাবি ছিল, যেহেতু তিনি এখন একা এবং বাবার সন্তান, তাই পারিবারিক পেনশন তাঁর প্রাপ্য। সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা ‘ক্যাট’ (CAT) প্রথমে ওই মহিলার মানবিক দিক বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র সরকার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের রায় খারিজ করে দেয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখে। আদালতের এই রায়ের পেছনে প্রধান যুক্তি ছিল ‘নির্ভরশীলতা’ বা ডিপেনডেন্সি।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হনআদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, পারিবারিক পেনশনের মূল উদ্দেশ্য হলো মৃত কর্মচারীর ওপর নির্ভরশীলদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করা। বাবার মৃত্যুর সময় ওই মহিলা বিবাহিত ছিলেন এবং স্বামীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তিনি বাবার আয়ের ওপর নির্ভর করতেন না। বাবার মৃত্যুর বহু বছর পর ডিভোর্স হওয়ার ফলে তিনি পুনরায় বাবার পেনশনের দাবি করতে পারেন না।
কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি
আদালতে কেন্দ্রের আইনজীবী ফটিক চন্দ্র দাস জোরালো যুক্তি পেশ করেন। তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পরিবারের সেই সমস্ত সদস্যরাই পেনশনের ভাগ পেতে পারেন, যারা ওই কর্মীর মৃত্যুর সময় তাঁর ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল ছিলেন। যেহেতু ২০০৩ সালে বাবার মৃত্যুর সময় মেয়েটি বিবাহিত ছিলেন, তাই তিনি এই আওতাভুক্ত নন। এখন হঠাৎ করে নিজের প্রয়োজনে এত বছর পর তিনি পেনশনের দাবি করতে পারেন না।
নিয়ম কী বলছে?
পারিবারিক পেনশনের ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের একটি নির্দেশিকায় কেন্দ্র স্পষ্ট করেছিল যে, বাবা-মা উভয়ের মৃত্যুর পর যদি মেয়ের ডিভোর্স হয়, তবে তিনি পেনশন পাবেন না। তবে ২০১৭ সালের একটি রায়ে বলা হয়েছিল, যদি বাবা বা মায়ের জীবদ্দশায় বিবাহবিচ্ছেদের মামলা শুরু হয়ে থাকে, তবেই মেয়ে পেনশন পেতে পারেন।
বর্তমান মামলায় দেখা গিয়েছে, বাবার মৃত্যুর সময় মেয়ের ডিভোর্সের কোনও মামলা বা প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তাই হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাবার মৃত্যুর পর বাপের বাড়িতে ফিরে এলেও বিবাহবিচ্ছিন্না কন্যা পারিবারিক পেনশনের অধিকারী হবেন না।