Form 16: শুধু আয়কর রিটার্নের জন্যই নয়, আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে এই নথি!

Form 16: আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করার সময় ফর্ম ১৬ (Form 16) একটি অত্যন্ত জরুরি নথি। বেতনভোগী শ্রেণীর মানুষের কাছে এটি খুবই পরিচিত একটি ফর্ম। সাধারণত, নিয়োগকর্তা তাঁর কর্মীদের এই ফর্মটি দেন, যেখানে কর্মীর বেতন থেকে কেটে নেওয়া কর (TDS) এবং তাঁর আয়ের বিস্তারিত বিবরণ থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন, শুধু আয়কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কাজে এই ফর্ম ১৬ অপরিহার্য? চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই অজানা অথচ প্রয়োজনীয় দিকগুলো।
ফর্ম ১৬ কী এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
ফর্ম ১৬ আসলে আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ধারা ২০৩ অনুযায়ী জারি করা একটি শংসাপত্র। এটি প্রমাণ করে যে আপনার নিয়োগকর্তা আপনার বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর কেটে সরকারের ঘরে জমা দিয়েছেন। এই ফর্মে দুটি অংশ থাকে – পার্ট এ এবং পার্ট বি।
- পার্ট এ (Part A): এতে মূলত নিয়োগকর্তা ও কর্মীর প্যান নম্বর, ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাকাউন্ট নম্বর (TAN), কত টাকা কর কাটা হয়েছে এবং কবে জমা দেওয়া হয়েছে, সেই সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক বিবরণ থাকে।
- পার্ট বি (Part B): এই অংশে কর্মীর বেতনের বিস্তারিত বিভাজন, বিভিন্ন ভাতা, আয়কর আইনের বিভিন্ন ধারায় প্রাপ্ত ছাড় (যেমন ৮০সি, ৮০ডি ইত্যাদি) এবং মোট করযোগ্য আয়ের হিসাব থাকে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়াকে সহজ ও নির্ভুল করার পাশাপাশি ফর্ম ১৬ আরও অনেক ক্ষেত্রেই আপনার সহায়ক হতে পারে।
আয়কর রিটার্ন ছাড়াও ফর্ম ১৬-এর একাধিক ব্যবহার:
অনেকেই ফর্ম ১৬-এর গুরুত্ব শুধু ITR ফাইলিং পর্যন্তই সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন। কিন্তু এর বাইরেও এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে, যা আপনার জেনে রাখা দরকার:
- আয়ের প্রমাণপত্র (Proof of Income): ফর্ম ১৬ আপনার আয়ের একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং আইনত বৈধ প্রমাণপত্র। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এটি আয়ের প্রমাণ হিসেবে জমা দেওয়া যেতে পারে।
- লোন বা ঋণ অনুমোদনের সহায়ক (Loan Approval): গৃহঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ বা গাড়ির ঋণ নেওয়ার সময় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি আপনার আয় এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই করার জন্য ফর্ম ১৬ চেয়ে থাকে। এই ফর্ম আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং নিয়মিত আয়ের প্রমাণ দেয়, যা ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
- ভিসা আবেদনের জন্য জরুরি (Visa Application): বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বিদেশে ভ্রমণের জন্য ভিসা আবেদন করার সময় আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে ফর্ম ১৬ দেখতে চায়। এটি আপনার নিয়মিত আয় এবং কর প্রদানের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করে ভিসাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়ায়।
- ক্রেডিট কার্ডের আবেদন (Credit Card Application): নতুন ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করলে ব্যাংক আপনার আয় যাচাই করে। ফর্ম ১৬ এক্ষেত্রে আপনার আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে কাজ করে এবং আপনার ক্রেডিট লিমিট নির্ধারণে সাহায্য করে।
- নতুন চাকরিতে যোগদানের সময় (Switching Jobs): যখন আপনি নতুন কোনো সংস্থায় যোগ দেন, তখন আপনার পূর্ববর্তী আয় এবং কর সংক্রান্ত তথ্য জানানোর প্রয়োজন হয়। ফর্ম ১৬ এই কাজটি সহজ করে দেয়। এর মাধ্যমে নতুন নিয়োগকর্তা আপনার ট্যাক্স কাঠামো সঠিকভাবে তৈরি করতে পারেন।
- অতিরিক্ত কর ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে (Claiming Tax Refunds): যদি আপনার বেতন থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর কেটে নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ফর্ম ১৬-এর সাহায্যে আপনি সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন ফাইল করে সেই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
- বিনিয়োগের একত্রিত প্রমাণ (Consolidated Investment Proof): ফর্ম ১৬-এর পার্ট বি-তে আপনার করা বিভিন্ন কর সাশ্রয়ী বিনিয়োগের (যেমন জীবন বীমা, পিপিএফ, ইত্যাদি) উল্লেখ থাকে। এটি আপনার বিনিয়োগের একটি একত্রিত চিত্র পেতে এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।
- কর কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে (Verification by Tax Authorities): আয়কর বিভাগ যদি কখনও আপনার জমা দেওয়া রিটার্ন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলে বা কোনো গরমিল খুঁজে পায়, সেক্ষেত্রে ফর্ম ১৬ একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল নথি হিসেবে আপনার বক্তব্যকে সমর্থন জোগায়।
- কর জমার প্রমাণ (Proof of Tax Paid): এই ফর্মটি নিশ্চিত করে যে আপনার নিয়োগকর্তা আপনার পক্ষ থেকে কর কেটে তা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন। এটি কর সংক্রান্ত বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখে।
সুতরাং, পরেরবার যখন আপনার হাতে ফর্ম ১৬ আসবে, তখন এটিকে শুধু আয়কর রিটার্ন ফাইলের একটি কাগজ হিসেবে না দেখে, এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোও মনে রাখবেন। এই একটি নথি আপনার বিভিন্ন আর্থিক প্রয়োজনে সহায়ক হতে পারে।