Ganges Water Treaty: ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তি, সিন্ধুর পর কি বাতিল হতে চলেছে এটিও? ঘুম উড়বে বাংলাদেশের

Ganges Water Treaty: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার ঐতিহাসিক গঙ্গা জলবন্টন চুক্তি (Ganges Water Sharing Treaty) পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত এই ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যে জলবন্টন নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে, যা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চুক্তির প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি. দেবেগৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি ১ থেকে মে ৩১) ফারাক্কা বাঁধ থেকে বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত জলের প্রবাহ নিশ্চিত করা। চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমের একটি নির্দিষ্ট দশ দিনের জন্য ভারত নিজের প্রয়োজন নির্বিশেষে বাংলাদেশকে ন্যূনতম ৩৫,০০০ কিউসেক জল সরবরাহ করতে বাধ্য। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের, বিশেষ করে খুলনা বিভাগের, কৃষি, পানীয় জল এবং লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন ভারত চুক্তিটি পর্যালোচনা করতে চায়?
- কূটনৈতিক পরিবর্তন: ভারত এখন “সফট ডিপ্লোমেসি” থেকে সরে এসে “জাতীয় স্বার্থ-প্রথম” (interest-first diplomacy) নীতির উপর জোর দিচ্ছে।
- জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্তমান বাস্তবতা: গত ৩০ বছরে গঙ্গা অববাহিকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলের চাহিদা এবং প্রাপ্যতার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে, যা পুরনো চুক্তিতে প্রতিফলিত হয়নি।
- নমনীয় জলবন্টন: ভারত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জল সরবরাহের পরিবর্তে একটি রিয়েল-টাইম বা বাস্তবসম্মত জলবন্টন ব্যবস্থা চালু করতে চায়, যা বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে।
- তিস্তা চুক্তিতে সুবিধা: গঙ্গা চুক্তি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভারত তিস্তা জলবন্টন চুক্তির মত অমীমাংসিত বিষয়ে কিছুটা সুবিধা আদায় করতে পারে।
বাংলাদেশের উদ্বেগ
ভারতের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন। তাদের প্রধান উদ্বেগের কারণগুলি হল:
- শুষ্ক মৌসুমে জলের প্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা, যা দেশের কৃষি, নৌ-চলাচল এবং পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
- ভারতের এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যেকার পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে দুর্বল করে দিতে পারে।
- এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগের প্রস্তাবের পর।
আগামী দিনের সম্ভাবনা
আগামী দিনে ভারত চুক্তির পর্যালোচনায় কিছু নতুন প্রস্তাব রাখতে পারে, যেমন:
- ন্যূনতম জল সরবরাহের গ্যারান্টি তুলে দেওয়া।
- রিয়েল-টাইম মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।
- জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে একটি নতুন জলবন্টন মডেল তৈরি করা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ চাইবে ন্যূনতম জলের প্রবাহ বজায় রাখতে, তথ্য আদান-প্রদানে স্বচ্ছতা আনতে এবং ভারতের একতরফা বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করতে।
এই চুক্তি পর্যালোচনা দুই দেশের জন্যই একটি বড় পরীক্ষা। এর ফলাফলের উপর নির্ভর করছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং এই অঞ্চলের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা।