Income Tax Rules: সেভিংস অ্যাকাউন্টে কত টাকা রাখতে পারবেন? জেনে নিন আয়কর দফতরের নতুন নিয়ম

Income Tax Rules: আজকাল প্রায় প্রত্যেকেরই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, বিশেষ করে সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা জমানোর প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে কত টাকা রাখতে পারবেন এবং কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে? আয়কর দফতরের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যা না মানলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
টাকা জমানোর কি কোনও ঊর্ধ্বসীমা আছে?
প্রথমেই জেনে রাখা ভালো যে, আয়কর দফতরের নিয়ম অনুযায়ী আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার কোনও নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা নেই। অর্থাৎ, আপনি যত খুশি তত টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে পারেন, যদি সেই টাকার উৎস বৈধ হয় এবং আপনি তার যথাযথ হিসাব দিতে পারেন। আপনার আয়কর রিটার্নে (ITR) যদি সেই টাকার উল্লেখ থাকে এবং কর সঠিকভাবে পরিশোধ করা হয়ে থাকে, তাহলে সাধারণত কোনও সমস্যা হয় না।
কখন ব্যাংক আপনার তথ্য আয়কর দফতরকে জানায়?
এখানেই আসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। যদিও টাকা রাখার কোনও সীমা নেই, কিছু বিশেষ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলি নিজে থেকেই সেই তথ্য আয়কর দফতরকে জানাতে বাধ্য থাকে। একে বলা হয় স্টেটমেন্ট অফ ফিনান্সিয়াল ট্রানজ্যাকশনস (SFT)।
- নগদ জমার ক্ষেত্রে: যদি কোনও ব্যক্তি একটি অর্থবর্ষে তাঁর এক বা একাধিক সেভিংস অ্যাকাউন্টে মোট ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি নগদ টাকা জমা করেন, তাহলে ব্যাংক সেই তথ্য আয়কর দফতরকে জানায়। শুধু সেভিংস অ্যাকাউন্টই নয়, এই নিয়ম অন্যান্য অ্যাকাউন্টের (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও ফিক্সড ডিপোজিট বাদে) ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এই তথ্য পাওয়ার পর আয়কর দফতর আপনার জমা দেওয়া আয়কর রিটার্নের সাথে এই লেনদেন মিলিয়ে দেখতে পারে। যদি কোনও গরমিল পাওয়া যায় বা আপনার আয়ের তুলনায় জমার পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশি হয়, তাহলে তাঁরা আপনাকে নোটিশ পাঠাতে পারেন এবং টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন।
নগদ টাকা তোলার ক্ষেত্রে টিডিএস (TDS on Cash Withdrawal)
আয়কর দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে বেশি পরিমাণে নগদ টাকা তুললেও তার উপর টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স) কাটা হতে পারে। এই নিয়মটি সেকশন ১৯৬এন (Section 194N) এর অন্তর্গত।
- যারা নিয়মিত আয়কর রিটার্ন ফাইল করেন: যদি আপনি বিগত তিনটি অ্যাসেসমেন্ট বছরে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন ফাইল করে থাকেন, তাহলে এক অর্থবর্ষে মোট ১ কোটি টাকার বেশি নগদ তুললে, ১ কোটি টাকার উপরের অঙ্কের উপর ২% হারে টিডিএস কাটা হবে।
- যারা নিয়মিত আয়কর রিটার্ন ফাইল করেন না: যদি আপনি বিগত তিনটি অ্যাসেসমেন্ট বছরের কোনও একটিতেও আয়কর রিটার্ন ফাইল না করে থাকেন, তাহলে নিয়মটি আরও কঠোর। সেক্ষেত্রে:
- এক অর্থবর্ষে মোট ২০ লক্ষ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকা পর্যন্ত নগদ তুললে, ২০ লক্ষ টাকার উপরের অঙ্কের উপর ২% হারে টিডিএস কাটা হবে।
- এক অর্থবর্ষে মোট ১ কোটি টাকার বেশি নগদ তুললে, ১ কোটি টাকার উপরের অঙ্কের উপর ৫% হারে টিডিএস কাটা হবে।
কিছু জরুরি পরামর্শ:
- সঠিক হিসাব রাখুন: আপনার সমস্ত আয়ের এবং বড় লেনদেনের সঠিক হিসাব ও কাগজপত্র রাখুন।
- আয়ের সাথে সঙ্গতি: নিশ্চিত করুন যে আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকা আপনার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
- নিয়মিত ITR ফাইল করুন: সময়মতো এবং সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন ফাইল করা অত্যন্ত জরুরি। এতে অনেক আইনি জটিলতা এড়ানো যায়।
- ডিজিটাল লেনদেন: বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ডিজিটাল মাধ্যম (যেমন নেট ব্যাংকিং, ইউপিআই, চেক) ব্যবহার করুন। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
- প্যান কার্ড: সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে প্যান নম্বর লিঙ্ক করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্যান উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
শেষ কথা
সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা এবং লেনদেন করার ক্ষেত্রে আয়কর দফতরের নিয়মগুলি জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়ম মেনে চললে আপনি যেমন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন, তেমনই দেশের আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতেও সাহায্য করবেন। কোনওরকম সন্দেহ বা জিজ্ঞাস্য থাকলে একজন অভিজ্ঞ কর পরামর্শদাতার (Tax Consultant) সাহায্য নিতে পারেন।