India Gold Repatriation: দেশে ফিরছে সোনা! RBI-এর এই সিদ্ধান্তে ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি ও সার্বভৌমত্বের ইঙ্গিত
India Gold Repatriation: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) তার বিদেশের ভল্টে সঞ্চিত সোনা দেশে ফিরিয়ে আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ স্থানান্তর নয়, বরং এটি ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে যে, দেশ তার নিজস্ব সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই সিদ্ধান্তের পিছনে থাকা অর্থনৈতিক তাৎপর্য এবং বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
অর্থনৈতিক প্রভাব এবং চ্যালেঞ্জ
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপের একাধিক অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে, যদিও এর সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িত।
প্রভাব
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন: ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে (forex reserves) সোনার অংশীদারিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে এটি প্রায় ৬-৭% ছিল, এখন তা বেড়ে ১০%-এ দাঁড়িয়েছে। এটি পোর্টফোলিওকে আরও বৈচিত্র্যময় এবং স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
- ঝুঁকি হ্রাস: সোনা দেশে সঞ্চয় করে রাখলে একটি বড় সুবিধা হলো বিদেশী নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি থেকে মুক্তি। অতীতে বিভিন্ন দেশের সম্পদ বিদেশী শক্তির দ্বারা ফ্রিজ করে দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। দেশে সোনা থাকলে সেই ঝুঁকি থাকে না, যা ভারতের সম্পদকে সুরক্ষিত রাখে।
- আত্মবিশ্বাস এবং স্থিতিশীলতা: এই পদক্ষেপটি ভারতীয় অর্থনীতির প্রতি একটি গভীর আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে। এটি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কার্যক্ষম স্বাধীনতারও প্রতীক, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করে।
চ্যালেঞ্জ
- নিরাপত্তা এবং সঞ্চয়: বিপুল পরিমাণ সোনা দেশে সুরক্ষিত রাখা একটি অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এর জন্য উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন ভল্ট, ২৪/৭ নজরদারি ব্যবস্থা এবং বড় অংকের বীমা প্রয়োজন, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
- তারল্য: যদিও ভারতের ১৯৯১ সালের মতো তাৎক্ষণিক তারল্যের প্রয়োজন নেই, তবে বিদেশে থাকা সোনার তুলনায় দেশে সঞ্চিত সোনা আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য কিছুটা কম তরল। অর্থাৎ, জরুরি প্রয়োজনে এটিকে দ্রুত আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবহার করা সামান্য কঠিন হতে পারে।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট: ডি-ডলারাইজেশন এবং সার্বভৌমত্ব
এই সোনা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপটি একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতার অংশ, যা ‘ডি-ডলারাইজেশন’ নামে পরিচিত। বিশ্বের অনেক দেশই মার্কিন ডলারের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে চাইছে এবং নিজস্ব আর্থিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।
ভারত তার সোনা দেশে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে পশ্চিমা-নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকার এবং নিজের আর্থিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। এটি মুদ্রা এবং নিষেধাজ্ঞা-ভিত্তিক যুদ্ধের ঝুঁকি থেকে দেশকে রক্ষা করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপটি ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি এবং আত্মনির্ভরতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে, যা আগামী দিনে দেশের আর্থিক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।