No-Cost EMI: কেনাকাটার আগে সাবধান! No-Cost EMI-এর লুকানো খরচ সম্পর্কে জানুন

No-Cost EMI: আজকাল অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম হোক বা বড় দোকান, সর্বত্রই এই অফারটি চোখে পড়ে। দামী মোবাইল, ল্যাপটপ বা বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সময় “বিনা খরচের কিস্তি” (No-Cost EMI)-র সুবিধা আমাদের আকর্ষণ করে। কিন্তু এই অফারটি কি সত্যিই বিনা খরচের? আসুন, এর গভীরে গিয়ে আসল সত্যিটা জেনে নেওয়া যাক।
No-Cost EMI: একটি সাধারণ উদাহরণ
ধরুন, সুমন একটি নতুন স্মার্টফোন কিনবেন যার দাম ৫০,০০০ টাকা। তিনি দেখলেন যে নো-কস্ট ইএমআই অপশন বেছে নিলে তিনি ৪,০০০ টাকার একটি আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট পাচ্ছেন। অর্থাৎ, তাঁকে মোট ৪৬,০০০ টাকা ৬ মাসের কিস্তিতে শোধ করতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি চমৎকার চুক্তি মনে হচ্ছে।
কিন্তু যখন তিনি তাঁর ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্ট দেখলেন, তখন অবাক হলেন। আসল ঘটনা হলো, ব্যাঙ্ক এই ৪৬,০০০ টাকার লেনদেনকে সুদসহ একটি ঋণ হিসেবে দেখিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪,০০০ টাকা সুদ এবং বাকি ৪২,০০০ টাকা আসল হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর এখানেই লুকিয়ে আছে অতিরিক্ত খরচ।
লুকানো খরচগুলো কী কী?
নো-কস্ট ইএমআই-এর সবচেয়ে বড় ফাঁদ হলো এর লুকানো খরচ, যা সাধারণত আমাদের চোখের আড়ালে থেকে যায়।
- সুদের ওপর GST: ভারতীয় নিয়ম অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের সুদের ওপর ১৮% জিএসটি (GST) দিতে হয়। সুমনের ক্ষেত্রে, ব্যাঙ্ক যে ৪,০০০ টাকা সুদ দেখিয়েছে, তার ওপর ১৮% হারে ৭২০ টাকা জিএসটি ধার্য করা হয়েছে।
- প্রসেসিং ফি: প্রায় সব ব্যাঙ্কই ইএমআই রূপান্তরের জন্য একটি এককালীন প্রসেসিং ফি নেয়। এই ফি সাধারণত ১৯৯ টাকা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। এর সাথে যুক্ত হয় জিএসটি।
এই দুটি খরচ যোগ করলে, সুমনের ৪,০০০ টাকার ডিসকাউন্ট আসলে কমে দাঁড়ালো ৩,০০০ টাকারও কমে। অর্থাৎ, যেটাকে ‘বিনা খরচ’ বলে প্রচার করা হচ্ছে, তার জন্যেও তাঁকে প্রায় ১,০০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হলো।
দীর্ঘমেয়াদী EMI-এর আকর্ষণ ও ঝুঁকি
প্রায়শই লক্ষ্য করা যায় যে, ইএমআই-এর মেয়াদ যত দীর্ঘ হয়, ডিসকাউন্টের পরিমাণও তত বাড়ে। এর কারণ হলো, দীর্ঘমেয়াদী ঋণে গ্রাহকের খেলাপি হওয়ার বা পেমেন্ট মিস করার ঝুঁকি বেড়ে যায়। একবার পেমেন্ট মিস হলেই ব্যাঙ্ক চড়া হারে জরিমানা ও সুদ (বার্ষিক ৩৬% থেকে ৪৮% পর্যন্ত) আদায় করতে শুরু করে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। এর ফলে গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কীভাবে সচেতন থাকবেন?
এর অর্থ এই নয় যে নো-কস্ট ইএমআই সবসময় খারাপ। সঠিক তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত নিলে এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
- তুলনা করুন: কেনার আগে সর্বদা এককালীন পেমেন্টের অফারের সাথে নো-কস্ট ইএমআই-এর অফার তুলনা করুন। অনেক সময় এককালীন পেমেন্টে এর থেকেও ভালো ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
- হিসাব করুন: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সম্ভাব্য জিএসটি এবং প্রসেসিং ফি যোগ করে আপনার মোট খরচ কত হচ্ছে, তা হিসাব করে নিন।
- শর্তাবলী পড়ুন: ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে গিয়ে ফোরক্লোজার চার্জ (ঋণ সময়ের আগে বন্ধ করার চার্জ) এবং অন্যান্য শর্তাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
শেষ কথা হলো, যেকোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সচেতন থাকা জরুরি। ‘No-Cost EMI’ শব্দটি শুনেই আকৃষ্ট না হয়ে, এর পেছনের সমস্ত হিসাব বুঝে তবেই এগোনো বুদ্ধিমানের কাজ।