Online Gaming Ban: ৩ বছরের জেল, ১ কোটি টাকা জরিমানা! অনলাইন গেমিং নিয়ে আসছে কড়া আইন!

Online Gaming Ban: অবশেষে ভারতে অনলাইন গেমিংয়ের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি হতে চলেছে। সম্প্রতি, ভারত সরকার অনলাইন গেমিংয়ের ক্ষেত্রে একটি নতুন বিল আনার প্রস্তাব করেছে, যার নাম “The Promotion and Regulation of Online Gaming Bill 2025″। এই বিলের মূল উদ্দেশ্য হল টাকার বিনিময়ে খেলা হয় এমন অনলাইন গেম, যেমন Dream11 এবং Rummy-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলিকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা। সরকারের এই পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে গেমিংয়ের প্রতি আসক্তি, আত্মহত্যা এবং অর্থ পাচারের মতো গুরুতর উদ্বেগ।
নতুন বিলের মূল বিষয়বস্তু
এই নতুন বিল অনুযায়ী, যে সমস্ত অনলাইন গেমে টাকার লেনদেন হয়, সেগুলিকে নিষিদ্ধ করা হবে। এর আওতায় ডেভেলপার, প্রোমোটার, প্ল্যাটফর্ম এবং বিজ্ঞাপনদাতারা সকলেই পড়বেন। এই বিলটিতে আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আইন অমান্যকারীদের ৩ বছর পর্যন্ত জেল এবং/অথবা ১ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে। যদি কোনো প্ল্যাটফর্ম বারবার নিয়ম লঙ্ঘন করে, তবে তাদের ডোমেন ব্লক করে দেওয়া হবে এবং প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
তবে, এই বিলটিতে ই-স্পোর্টস এবং টাকার বিনিময়ে খেলা অনলাইন গেমের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য করা হয়েছে। সরকার স্কিল-বেসড প্রতিযোগিতামূলক গেমিংকে উৎসাহিত করতে চায় এবং সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি নতুন “ন্যাশনাল ই-স্পোর্টস অথরিটি” গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই অথরিটির কাজ হবে পেশাদার গেমিং টুর্নামেন্ট এবং স্পনসরশিপ নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে তরুণ প্রজন্ম এবং স্বল্প আয়ের মানুষ আর্থিক ক্ষতির শিকার না হয়।
সরকারের এই পদক্ষেপের কারণ
- মানসিক ও পারিবারিক সমস্যা: এই ধরনের গেমের কারণে মানসিক সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
- আর্থিক ক্ষতি: বহু তরুণ তাদের সমস্ত সঞ্চয় এই গেমে হেরে যাচ্ছে, এমনকি ঋণ নিয়ে এবং পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করেও এই খেলার নেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
- অবৈধ কার্যকলাপ: এই গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলিকে অবৈধ বাজি, হাওয়ালা লেনদেন এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনস্বার্থেই এই নিষেধাজ্ঞা জরুরি বলে মনে করছে সরকার।
গেমিং ইন্ডাস্ট্রির উদ্বেগ
অন্যদিকে, অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রি সরকারের এই সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে ভারতের অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রির বাজারমূল্য প্রায় $3.7 বিলিয়ন, যা 2029 সালের মধ্যে $9 বিলিয়নে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই রাজস্বের 86% আসে রিয়েল-মানি গেমিং থেকে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, গেমিং, ফিনটেক এবং মার্কেটিং সেক্টরে হাজার হাজার মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ভারতে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করবে। ইন্ডাস্ট্রির মতে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যবহারকারীরা অনিবন্ধিত অফশোর অ্যাপের দিকে ঝুঁকবে, যার ফলে প্রতারণার ঝুঁকি আরও বাড়বে।
All India Gaming Federation-এর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে, যাতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা চালু করা হয়। তাদের মতে, ফ্যান্টাসি স্পোর্টস, রামি এবং পোকারের মতো গেমগুলি দক্ষতার উপর নির্ভরশীল, শুধুমাত্র ভাগ্যের উপর নয়। তাই এগুলিকে নিষিদ্ধ না করে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
এখন দেখার বিষয়, লোকসভায় এই বিলটি পাশ হয় কিনা এবং ভারতের অনলাইন গেমিংয়ের ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়।