পেনশনার

Pension Reform India: ২০৫০ সালের পেনশন সংকট! ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান পেনশন’-সহ ৫টি বড় সমাধানের প্রস্তাব

Pension Reform India: ভারত বর্তমানে একটি গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠী। ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের জনতাত্ত্বিক কাঠামোতে এক বিশাল পরিবর্তন আসতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক প্রবীণ নাগরিকের আর্থিক সুরক্ষা এবং যত্ন নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই আসন্ন সংকট মোকাবিলায় এবং আর্থিক চাপ সামলাতে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও সমাধানের প্রস্তাবনা উঠে এসেছে।

যদি এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ২০৫০ সালে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অসম্ভব হতে পারে। এই প্রতিবেদনে আমরা সেই প্রস্তাবিত ৫টি প্রধান সমাধান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার খুঁটিনাটি আলোচনা করব।

২০৫০ সালের চ্যালেঞ্জ এবং প্রস্তাবিত ৫টি সমাধান

ভবিষ্যতের এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রস্তাবিত পাঁচটি প্রধান উপায় নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ইউনিভার্সাল পেনশন (Universal Pension)

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, দেশের সমস্ত বয়স্ক নাগরিকের জন্য একটি সর্বজনীন বা ইউনিভার্সাল পেনশন ব্যবস্থা চালু করা উচিত। এটি একটি ‘নন-কন্ট্রিবিউটারি’ বা অ-অবদানমূলক ব্যবস্থা হবে, অর্থাৎ এর জন্য বয়স্কদের আগে থেকে টাকা জমা দিতে হবে না। এই পেনশনের পরিমাণ ‘লিভিং ওয়েজ’ (Living Wage) বা জীবনধারণের ন্যূনতম খরচের সাথে যুক্ত থাকা উচিত, যাতে প্রবীণরা সম্মানের সাথে বাঁচতে পারেন।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

২. ওয়ান নেশন, ওয়ান পেনশন (Unified Framework)

বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রকের অধীনে ভিন্ন ভিন্ন পেনশন স্কিম চালু রয়েছে, যা অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এই সমস্যা সমাধানে একটি ‘একীভূত কাঠামো’ বা Unified Framework তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো সমস্ত স্কিমকে এক ছাতার তলায় এনে ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান পেনশন’-এর মতো একটি শক্তিশালী সিস্টেম তৈরি করা।

৩. রাজনৈতিক পেনশনে বড় সংস্কার

জনগণের ট্যাক্সের টাকার সঠিক ব্যবহারের স্বার্থে রাজনেতাদের পেনশনেও সংস্কার আনার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী:

  • রাজনেতাদের পেনশন ব্যবস্থাকে আরও যুক্তিযুক্ত করতে হবে।
  • যেসকল নেতার পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তি রয়েছে, তাদের পেনশন সুবিধা বন্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

৪. টায়ার পেনশন মডেল (Tiered Pension Model)

পেনশন ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করতে একটি ত্রি-স্তরের বা ‘টায়ার’ ভিত্তিক মডেলের প্রস্তাব করা হয়েছে। নিচে এই মডেলটি বিস্তারিত দেওয়া হলো:

টায়ার (Level)বিবরণ
Tier 1সরকার দ্বারা প্রদত্ত একটি বুনিয়াদি ইউনিভার্সাল পেনশন, যা সকল বয়স্ক নাগরিক পাবেন।
Tier 2সকল কর্মচারী এবং গির্গ ওয়ার্কারদের (Gig Workers) জন্য বাধ্যতামূলক অবদানমূলক পেনশন। বর্তমানে থাকা ১৫,০০০ টাকার স্যালারি ক্যাপ বা বেতন সীমা তুলে দিয়ে এটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা উচিত।
Tier 3স্বেচ্ছায় সঞ্চয় প্রকল্প বা ভলান্টিয়ারি সেভিংস স্কিমগুলোকে আরও নমনীয় এবং সহজ করা।

৫. সামাজিক সুরক্ষার জন্য সেস (Cess)

সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বা ফান্ড জোগাড় করতে একটি বিশেষ ‘সেস’ (Cess) বা উপকর আরোপ করতে পারে। এর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ শুধুমাত্র বয়স্কদের কল্যাণ ও পেনশনের জন্য ব্যবহার করা হবে।

উপসংহার: চ্যারিটি নয়, সাংবিধানিক অধিকার

ভারত বর্তমানে একটি গুরুতর পেনশন সংকটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০ কোটি বয়স্ক মানুষের দায়িত্ব নেওয়া কোনো সহজ কাজ হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারকে পেনশন বিষয়টিকে কোনো ‘দান’ বা ‘চ্যারিটি’ হিসেবে দেখলে চলবে না, বরং এটিকে নাগরিকদের ‘সাংবিধানিক অধিকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

এই লক্ষ্য পূরণের জন্য ভারতের কর-জিডিপি অনুপাত (Tax-to-GDP Ratio) উন্নত করা এবং সম্পদের সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক রিফর্মস বা সংস্কার এবং বিনিয়োগের মাধ্যমেই একমাত্র এই ভবিষ্যৎ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button