Primary Recruitment 2025: প্রাথমিকে ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জল্পনা! ভাইরাল নোটিশের আসল সত্য জানুন
Primary Recruitment 2025: রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ফের এক নতুন জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একটি নোটিফিকেশন ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়েছে। ওই নোটিফিকেশনে দাবি করা হচ্ছে যে, আসন্ন ২০২৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শূন্যপদের সংখ্যা বা ভ্যাকেন্সি এক লাফে বাড়িয়ে ৩০,০০০ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চাকরিপ্রার্থীদের মনে এই খবরটি প্রবল আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু এই দাবির বাস্তবিক ভিত্তি কতটা? আজ আমরা এই ভাইরাল নোটিশের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আসল সত্যটি তুলে ধরব।
ভাইরাল দাবি বনাম বাস্তব চিত্র
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) তাদের আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য আগেই একটি রূপরেখা তৈরি করেছিল। সরকারিভাবে ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মোট শূন্যপদের সংখ্যা ১৩,৪২১ টি। কিন্তু গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ উল্লেখ করা একটি ভাইরাল বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হচ্ছে যে, এই সংখ্যাটি সংশোধন করে ৩০ হাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই বিজ্ঞপ্তিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন। পর্ষদ বা শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে এমন কোনও অফিসিয়াল ঘোষণা করা হয়নি।
কেন ৩০ হাজার শূন্যপদ বৃদ্ধি অসম্ভব?
হঠাৎ করে ১৩ হাজার থেকে শূন্যপদ বাড়িয়ে ৩০ হাজার করা যে বাস্তবে সম্ভব নয়, তার পেছনে একাধিক প্রশাসনিক ও আর্থিক কারণ রয়েছে। নিচে প্রধান কারণগুলি আলোচনা করা হলো:
- অর্থ দপ্তরের অনুমোদনের অভাব: সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যেকোনো নতুন পদ সৃষ্টি বা শূন্যপদ বৃদ্ধির জন্য রাজ্য অর্থ দপ্তরের (Finance Department) বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কারণ, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন ও ভাতার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হয়। বর্তমানে পর্ষদের হাতে বা স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে ৩০,০০০ পদের জন্য অর্থ দপ্তরের এমন কোনো ছাড়পত্র নেই।
- প্রশাসনিক বাস্তবতা: অনেকে মনে করছেন পঞ্চম শ্রেণীকে প্রাথমিক স্তরে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে শূন্যপদ বাড়তে পারে। এটি আংশিক সত্য হলেও, এর ফলে খুব বেশি হলে ১৫০০ থেকে ২০০০ নতুন পদ তৈরি হতে পারে। কিন্তু একধাক্কায় প্রায় ১৬,০০০ পদ বাড়িয়ে ৩০ হাজারে নিয়ে যাওয়া এই মুহূর্তে প্রশাসনিকভাবে অসম্ভব।
- পর্ষদের অতীত রেকর্ড: অতীতে দেখা গেছে, প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বের হওয়ার পর পর্ষদ সাধারণত ঘোষিত শূন্যপদের সংখ্যায় বড় কোনো পরিবর্তন করে না। আইনি জটিলতা থাকলেও তারা ঘোষিত পদেই নিয়োগ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে।
তথ্য সারণী: আসল বনাম নকল
বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য নিচের সারণীটি লক্ষ্য করুন:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন| বিবরণ | অফিসিয়াল তথ্য | ভাইরাল দাবি (ভুয়ো) |
|---|---|---|
| মোট শূন্যপদ | ১৩,৪২১ টি | ৩০,০০০ টি |
| স্ট্যাটাস | অনুমোদিত ও বহাল | সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন |
| নিয়োগ বর্ষ | ২০২৫ | ২০২৫ |
আইনি জটিলতা ও সুপারনিউমারারি পোস্ট
২০২০-২২ শিক্ষাবর্ষের ডিএলএড প্রার্থীদের মামলা এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে পর্ষদ চাইলে ‘সুপারনিউমারারি’ বা অতিরিক্ত পদ তৈরি করতে পারে। কিন্তু অতীতে এসএসসি (SSC) নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ধরনের অতিরিক্ত পদ তৈরি করা নিয়ে ব্যাপক আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নতুন করে ৩০ হাজার ভ্যাকেন্সি ঘোষণা করে কোনো আইনি প্যাঁচে জড়াতে চাইছে না।
চাকরিপ্রার্থীদের কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কোনো বেনামী বিজ্ঞপ্তি দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বর্তমানে ১৩,৪২১ টি শূন্যপদেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সঠিক তথ্যের জন্য সর্বদা পর্ষদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।