Teacher: “চুরি করেও যদি কেউ বলে, চুরির সংজ্ঞাটা আগে প্রতিষ্ঠা হোক…” ৩২০০০ মামলায়, আক্রমণে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

Primary Teacher Recruitment Case: পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে আইনি লড়াই অব্যাহত। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আদালতে দুর্নীতির সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এই মামলায় এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। পর্ষদের এই অবস্থানকে তীব্র ভাষায় খণ্ডন করেছেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
দুর্নীতির সংজ্ঞা নিয়ে পর্ষদের প্রশ্ন
আদালতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীরা সওয়াল করেন যে, শুধুমাত্র দুর্নীতির অভিযোগ আনলেই তা প্রমাণিত হয় না। তাঁদের মতে, দুর্নীতি প্রমাণ করার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে এবং বেআইনি আর্থিক লেনদেনের সুস্পষ্ট প্রমাণ দাখিল করতে হবে। পর্ষদের আরও দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও অনিয়ম বা নিয়মভঙ্গ হলেই তা সরাসরি দুর্নীতি হিসেবে গণ্য হতে পারে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আদালতে পেশ করা হচ্ছে। ৩২,০০০ চাকরি বাতিল এবং পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অপসারণ ও গ্রেফতারির প্রেক্ষাপটে পর্ষদের এই যুক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির বিষয়টিরও উল্লেখ করা হয়।
পর্ষদের তরফে আরও প্রশ্ন তোলা হয় যে, একটি বৃহৎ নিয়োগ প্রক্রিয়ায়, যেখানে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম উপেক্ষা করা হলেও তা দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও পর্ষদ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে বলে জানা গিয়েছে।
আইনজীবীর পাল্টা জবাব ও দুর্নীতির প্রমাণ
অন্যদিকে, এই মামলার অন্যতম আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এই সকল যুক্তি সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে প্রমাণ করেছে। বিভিন্ন তদন্তে ব্যাপক দুর্নীতি এবং বেআইনিভাবে আর্থিক সুবিধা লাভের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, “মন্ত্রীর (পার্থ চট্টোপাধ্যায়) বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ, সোনা এবং বিভিন্ন সম্পত্তির বিষয়ে রাজ্য সরকার বা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কেন নীরব?”। তিনি অভিযোগ করেন যে, রাজ্য সরকার আসলে দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাঁর আরও দাবি, এই দুর্নীতির জাল তৃণমূল স্তরের কর্মী থেকে শুরু করে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং তাঁরা আদালতে এই বিষয়টি প্রমাণ করবেন। পর্ষদের দুর্নীতির সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে তিনি একটি চোরের নিজের স্বপক্ষে সাফাই দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “চুরি করেও যদি কেউ বলে আমি তো চুরি করিনি, চুরির সংজ্ঞাটা আগে প্রতিষ্ঠা হোক, তারপর আমার বিচার হোক, বিষয়টা সেই জায়গায় যাচ্ছে”।
মামলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও আদালতের অবস্থান
আদালত কার্যত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে জানিয়েছে যে, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আইন মেনে এবং যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়েছে, তা তাঁদেরই প্রমাণ করতে হবে। দুর্নীতির সংজ্ঞা নিয়ে পর্ষদের এই আকস্মিক প্রশ্ন মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, দুর্নীতির স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছে এবং তা দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বারাও স্বীকৃত।
এই মামলা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং সামগ্রিক জবাবদিহিতার প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যখন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দুর্নীতির মৌলিক সংজ্ঞাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, তখন অন্যদিকে অভিজ্ঞ আইনজীবীরা দুর্নীতির সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ থাকার দাবি করছেন। আগামী দিনে এই মামলার রায় রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্র এবং সাধারণ মানুষের আস্থার উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। সকলের দৃষ্টি এখন আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং চূড়ান্ত রায়ের দিকে।