মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল নিয়ে নতুন লড়াই! সুপ্রিমকোর্টে প্রাথমিক মামলায় কি হতে চলেছে? জানুন বিস্তারিত | Primary Teacher Recruitment

Primary Teacher Recruitment: সম্প্রতি ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়, সুপ্রিম কোর্টে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গণেশ আটা বনাম ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ প্রাইমারি এডুকেশন শিরোনামের এই মামলাটি ২৫২ জন শিক্ষকের নিয়োগের সাথে জড়িত, এবং এটি একটি কিউরেটিভ পিটিশন (Curative Petition) হিসেবে দাখিল করা হয়েছে, যা আইনি প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। আসুন, এই মামলার খুঁটিনাটি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মামলার প্রেক্ষাপট
এই নতুন মামলাটির ডায়েরি নম্বর হল 56264/2025 এবং এটি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ ফাইল করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এটি একটি সাধারণ মামলা নয়, বরং একটি কিউরেটিভ পিটিশন। সাধারণত, যখন কোনও সিভিল আপিল এবং তারপরে রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়ে যায়, তখন শেষ চেষ্টা হিসেবে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করা হয়। এক্ষেত্রেও, আবেদনকারীরা তাদের নিয়োগের দাবি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই মামলাটি মূলত একটি রিভিউ পিটিশনের রায়ের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, যার নম্বর ছিল 1167/2025।
এই আইনি জটিলতার শুরু পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ১৬,৫০০ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি থেকে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেও দেখা যায় যে, ৩৯২৯টি শূন্যপদ পূরণ হয়নি। বহু যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও এই পদগুলি খালি থেকে যায়। আলি হোসেন মণ্ডল সহ ২৫২ জন চাকরিপ্রার্থীর দাবি ছিল, তাঁদের এই অবশিষ্ট শূন্যপদগুলিতে নিয়োগ করা হোক কারণ তাঁরা যোগ্য এবং নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের মতে, এই নিয়োগ তাঁদের ন্যায্য অধিকার।
সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণ
এই ২৫২ জন প্রার্থীর নিয়োগের বিষয়টি এর আগেও আদালতে উঠেছিল। পূর্ববর্তী রায়গুলিতে, সুপ্রিম কোর্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল যা এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন- প্যানেলের মেয়াদোত্তীর্ণতা: আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছিল যে, যে প্যানেল বা মেরিট লিস্ট থেকে এই নিয়োগের দাবি করা হচ্ছে, তা ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১-এ প্রকাশিত হয়েছিল এবং রুল ১২ (রিক্রুটমেন্ট রুলস ২০১৬) অনুযায়ী এক বছর পর অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২-এ এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
- নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সূচনা: আদালত আরও উল্লেখ করে যে, পুরনো প্যানেল থেকে নিয়োগ সম্ভব নয় কারণ ইতিমধ্যেই একটি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হলে তা আইনি জটিলতা তৈরি করবে।
- আবেদনে বিলম্ব: আবেদনকারীরা প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক পরে, মে ২০২২-এ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, যা তাদের দাবির বৈধতাকে দুর্বল করে দেয়।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল যে, পূর্ববর্তী রায়গুলিতে কোনও স্পষ্ট ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাই রিভিউ পিটিশনটি খারিজ করা হয়েছিল।
কিউরেটিভ পিটিশনের তাৎপর্য
কিউরেটিভ পিটিশন হলো বিচার ব্যবস্থার একটি বিশেষ সুযোগ, যেখানে আবেদনকারীরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে পূর্ববর্তী রায়গুলিতে মারাত্মক কোনও ভুল ছিল বা ন্যায়বিচারের নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে, আদালত খুব বিরল ক্ষেত্রেই এই ধরনের পিটিশন গ্রহণ করে থাকে। আদালত যদি মনে করে যে রিভিউ পিটিশনের রায়ে কোনও গুরুতর ভুল ছিল, তবেই এটি পুনর্বিবেচনার জন্য গৃহীত হতে পারে।
ভবিষ্যতে কি হতে পারে?
এই মামলাটি এখনও শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবে যে এই পিটিশনটি আদৌ গ্রহণযোগ্য কিনা। এই ২৫২ জন চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ এখন সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর নির্ভরশীল। যদি আদালত এই পিটিশন গ্রহণ করে এবং তাদের পক্ষে রায় দেয়, তবে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে। তবে পূর্ববর্তী রায় এবং আইনি প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, পথটি বেশ কঠিন বলেই মনে হচ্ছে। এই মামলার পরবর্তী আপডেটের জন্য আমাদের সকলকে অপেক্ষা করতে হবে।