Retirement Planning: মাসে ১ লাখ টাকা বেতন হলে ১০ কোটি জমানো কি সম্ভব? দেখুন লগ্নির সঠিক অঙ্ক ও কৌশল
Retirement Planning: বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ তরুণ উপার্জনকারীর কাছে ১০ কোটি টাকা হল অবসরের নতুন বেঞ্চমার্ক। আর্থিক নিরাপত্তা, সন্তানদের উচ্চশিক্ষা বা সময়ের আগেই অবসর গ্রহণের জন্য এই পরিমাণ অর্থ যথেষ্ট বলে মনে করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, এটি কি আদৌ বাস্তবসম্মত লক্ষ্য? এর উত্তর ভাগ্য বা সময়ের ওপর নয়, বরং নির্ভর করে আপনার আয়, সঞ্চয়ের হার এবং লগ্নির মেয়াদের ওপর। যাদের মাসিক আয় ১ লাখ টাকা, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ লক্ষ্য হতে পারে, তবে অঙ্কের হিসাবটি একটু ভিন্ন কথা বলে।
ইপিএফ (EPF) কতটা অবদান রাখে?
আপনার এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফ (EPF) হল এই পরিকল্পনার ভিত্তি—যা নিরাপদ, করমুক্ত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ হয়। সোর্স অনুযায়ী, যদি আপনার মূল বেতন (Basic Salary) মাসে ১ লাখ টাকা হয়, তবে ২৪% (নিয়োগকর্তা + কর্মী) অবদানের অর্থ হল প্রতি মাসে ২৪,০০০ টাকা ইপিএফ-এ জমা হওয়া। বার্ষিক ৮.২৫% রিটার্ন এবং বেতনে ৮% বার্ষিক বৃদ্ধির হিসাব ধরলে, ১৫ বছর পর এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১.৩ থেকে ১.৪ কোটি টাকা। এটি একটি ঝুঁকিমুক্ত এবং নিশ্চিত অংশ, কিন্তু ১০ কোটি টাকার লক্ষ্য থেকে এটি আপনাকে অনেকটাই দূরে রাখে।
এসআইপি (SIP)-এর ভূমিকা কী?
ইপিএফ বাদ দেওয়ার পর যদি আপনার হাতে থাকা বেতন (Post-tax take-home) ৮৫,০০০ থেকে ৮৮,০০০ টাকার মধ্যে হয় এবং মাসিক খরচ ৫৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা হয়, তবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের জন্য আপনার হাতে থাকবে প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা। যদি আপনি প্রতি বছর ১০% হারে বিনিয়োগ বাড়ান (Step-up) এবং গড়ে ১২% রিটার্ন পান, তবে ১৫ বছরে আপনার এসআইপি (SIP) থেকে জমবে প্রায় ২.৩ থেকে ২.৬ কোটি টাকা।
নিচে ১৫ বছরের হিসাবের একটি সম্ভাব্য চিত্র দেওয়া হলো:
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হন| খাত | ১৫ বছর পর আনুমানিক স্থিতি |
|---|---|
| ইপিএফ (EPF) | ১.৩ – ১.৪ কোটি টাকা |
| এসআইপি (SIP) | ২.৩ – ২.৬ কোটি টাকা |
| মোট সঞ্চয় | ৩.৫ – ৪ কোটি টাকা |
অর্থাৎ, ইপিএফ এবং এসআইপি মিলিয়ে ১৫ বছর পর আপনার মোট সঞ্চয় হবে ৩.৫ থেকে ৪ কোটি টাকা—যা ১০ কোটি না হলেও দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক স্বাধীনতার পথে একটি বড় অগ্রগতি।
১০ কোটিতে পৌঁছতে আসলে কী প্রয়োজন?
১০ কোটি টাকার লক্ষ্যটি ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়, তবে এর জন্য প্রয়োজন স্কেল বা সময়। ১৫ বছরে এই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আপনাকে ইপিএফ এবং এসআইপি মিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এটি তখনই সম্ভব যদি আপনার বেতন মাসে ৩ থেকে ৩.৫ লাখ টাকা হয়।
যাদের মাসিক আয় ১ লাখ টাকা, তাদের জন্য ১৫ বছরের বদলে ২০ থেকে ২২ বছরের সময়সীমা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত। সময়সীমা বাড়লে কম্পাউন্ডিং (Compounding) আপনার পক্ষে কাজ করে। একই হারে বিনিয়োগ চালিয়ে গেলে ২১ বা ২২তম বছরে আপনি ১০ কোটি টাকার ল্যান্ডমার্কে পৌঁছে যাবেন।
ধাপে ধাপে লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায়
- বিনিয়োগ বাড়ান: ছোট দিয়ে শুরু করুন, কিন্তু প্রতি বছর আপনার এসআইপি বাড়ান। ২৫,০০০ টাকার এসআইপি-তে প্রতি বছর ১০% বৃদ্ধি আপনার তহবিলের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করে দিতে পারে।
- বাড়তি আয় কাজে লাগান: বেতন বাড়লে, বোনাস বা ফ্রিল্যান্স থেকে আয় হলে তা লাইফস্টাইল আপগ্রেডে খরচ না করে এসআইপি-তে রিঅ্যালোকেট করুন।
- ভিপিএফ (VPF) ব্যবহার করুন: যদি আপনার সংস্থা অনুমতি দেয়, তবে ভলান্টারি প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভিপিএফ-এ বিনিয়োগ করুন। এটি নিরাপদ এবং ট্যাক্স বেনিফিট যুক্ত।
মাসিক ১ লাখ টাকা বেতনে ১৫ বছরে ১০ কোটি জমানো অবাস্তব হলেও ৩.৫-৪ কোটি জমানো সম্ভব। তবে ২০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরলে কোনোরকম অবাস্তব ত্যাগ ছাড়াই ৮-১০ কোটি টাকা জমানো সম্ভব। মূল চাবিকাঠি হল ধারাবাহিকতা এবং ধৈর্য।
দাবিত্যাগ: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনো আর্থিক পরামর্শ নয়। মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকির সাপেক্ষ, বিনিয়োগের আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নথি ভালো করে পড়ে নেবেন।