SC/ST Creamy Layer: সংরক্ষণ নীতিতে নতুন মোড়? সুপ্রিম কোর্টের নোটিশে কেন্দ্রের অবস্থান ঘিরে জল্পনা

SC/ST Creamy Layer: বর্তমানে ভারতীয় সংরক্ষণ নীতি এক নতুন মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি (OBC)-দের ক্ষেত্রে চালু থাকা ‘ক্রিমি লেয়ার’ বা বিত্তশালী স্তর এবার তফসিলি জাতি (SC) এবং তফসিলি উপজাতি (ST)-দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা, সেই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানতে চেয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতের সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।
মূল ঘটনা
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে ওবিসি-দের মতো এসসি এবং এসটি সম্প্রদায়ের বিত্তশালী ব্যক্তিদেরও সংরক্ষণের আওতার বাইরে রাখা উচিত। এই আবেদনের ভিত্তিতেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রকে নোটিশ পাঠিয়েছে এবং আগামী ১০ই অক্টোবরের মধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে। এই ঘটনাটি সংরক্ষণ ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ প্রকৃত অনগ্রসরদের কাছে সুযোগ পৌঁছে দেওয়া, তা নিয়ে নতুন করে ভাবনার উদ্রেক করেছে।
‘ক্রিমি লেয়ার’ কী?
‘ক্রিমি লেয়ার’ ধারণাটির প্রথম প্রয়োগ হয় ১৯৯২ সালের বিখ্যাত ‘ইন্দিরা সাহনি মামলা’-র রায়ে। এর মূল উদ্দেশ্য হল, অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে যারা অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে যথেষ্ট উন্নতি করেছে, তাদের সংরক্ষণের সুবিধা থেকে বিরত রাখা, যাতে ওই শ্রেণির সত্যিকারের পিছিয়ে পড়া মানুষরা সংরক্ষণের সুযোগ পায়। বর্তমানে সরকারি চাকুরিজীবী ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকার বেশি আয় হলে সেই ব্যক্তিকে ওবিসি ‘ক্রিমি লেয়ার’-এর অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়।
এসসি/এসটি সংরক্ষণে ‘ক্রিমি লেয়ার’
এখন পর্যন্ত, এসসি এবং এসটি-দের ক্ষেত্রে ‘ক্রিমি লেয়ার’ ধারণাটি শুধুমাত্র সরকারি চাকুরির পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ২০১৮ সালের ‘জরনাইল সিং মামলা’-য় সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টি স্পষ্ট করে। তবে, ২০২৪ সালের ‘স্টেট অফ পাঞ্জাব বনাম দভিন্দর সিং’ মামলায় এক সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রাজ্য সরকারগুলিকে এসসি/এসটি ক্যাটাগরির মধ্যে উপ-শ্রেণিবিন্যাস তৈরির ক্ষমতা দেয়, যার ফলে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ব্যক্তিরা সংরক্ষণের সুবিধা পেতে পারেন। যদিও এরপরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা জানিয়ে দেয় যে এসসি/এসটি সংরক্ষণে ‘ক্রিমি লেয়ার’ চালু করার কোনো পরিকল্পনা নেই এবং এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র সংসদেরই রয়েছে।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হননতুন আবেদন এবং ‘টু-টিয়ার’ ব্যবস্থা
রাম শঙ্কর প্রজাপতি এবং যমুনা প্রসাদের দায়ের করা নতুন আবেদনে একটি ‘টু-টিয়ার’ বা দ্বি-স্তরীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, এসসি/এসটি সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তারা সংরক্ষণের একটি বড় অংশ পাবেন। এর মাধ্যমে মোট সংরক্ষণের কোটা কমানো হবে না, বরং সুবিধাভোগীদের মধ্যে একটি ন্যায্য বন্টন নিশ্চিত করা হবে।
পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি
- সমর্থকদের যুক্তি: তাঁদের মতে, এই ব্যবস্থা চালু হলে সংরক্ষণের সুবিধা সত্যিকারের দুঃস্থ ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছে পৌঁছাবে। বিত্তশালীরা যদি সংরক্ষণের সুবিধা নিতে থাকে, তবে তা সংবিধানের মূল ভাবনার পরিপন্থী।
- বিরোধীদের যুক্তি: তাঁদের মতে, জাতপাতের বৈষম্য এবং সামাজিক বঞ্চনা এখনও ভারতীয় সমাজে প্রকট। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মানদণ্ড দিয়ে অনগ্রসরতা মাপা সম্ভব নয়। তাঁরা মনে করেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে প্রশাসনিক জটিলতা বাড়বে এবং এর অপব্যবহারের সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিচারবিভাগের ক্ষমতা, ওবিসি এবং এসসি/এসটি-দের ক্ষেত্রে ‘ক্রিমি লেয়ার’ প্রয়োগের ভিন্নতা এবং শুধুমাত্র আয়ের ভিত্তিতে ‘অগ্রসরতা’ মাপার মতো কঠিন প্রশ্নগুলি উঠে আসছে। সুপ্রিম কোর্টের এই নোটিশ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আগামী দিনের অবস্থান ভারতের সংরক্ষণ নীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।